Follow Us @soratemplates

Saturday, June 18, 2016

Conductivity of Electricity Through Gases (গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহন)

June 18, 2016 0 Comments
দুটি আলাদা বিভবের বস্তুকে একটি পরিবাহী তার দ্বারা যুক্ত করা হলে, নিম্নবিভবের বস্তু থেকে উচ্চবিভবের বস্তুতে ইলেকট্রন পরিবহনের ফলে বস্তুদুটির মধ্যে একটি তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, যতক্ষন না বস্তুদুটির বিভব সমান হয়। তাই এখানে তড়িৎ পরিবহন করে পরিবাহীর মধ্যে থাকা মুক্ত ইলেকট্রন।

বায়ুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপরিবহন:
বায়ু তড়িতের অপরিবাহী। তাই সাধারণ অবস্থায় বায়ুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপরিবহন করে না। কিন্তু দুটি তড়িৎগ্রস্থ বস্তুর মধ্যে বিভবের পার্থক্য খুব বেশি হলে এবং বস্তুদুটিকে খুব কাছাকাছি আনলে, বস্তুদুটির মধ্যবর্তী ব্যবধানে তড়িৎ স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। কারণ, সাধারণ অবস্থায় বায়ুর মধ্যে কিছু আয়ন ও তড়িৎগ্রস্থ অণু বর্তমান থাকে। এই অবস্থায় বিপরীত তড়িৎগ্রস্থের দুটি বস্তুকে পরস্পর কাছে আনলে ওদের মাঝখানে একটি তড়িৎক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এই তড়িৎক্ষেত্রের মধ্যে থাকা বায়ুর আয়ন ও তড়িৎগ্রস্থ অণু থাকলে তারা এই তড়িৎক্ষেত্রের প্রভাবে নিজের তড়িতের বিপরীত তড়িৎগ্রস্থ বস্তুর দিকে ছুটতে থাকে। এই অবস্থায় বায়ুর অন্যান্য নিস্তড়িৎ অণু ও আয়নগুলিকে ধাক্কা দেয়। আয়নের বেগ খুব বেশী হলে, ওই আয়ন, নিস্তড়িৎ অণু থেকে ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন করে এবং বায়ুর অন্যান্য নিস্তড়িৎ অনুগুলিও আয়নিত হয়ে যায়। ক্রমাগত এই সংঘর্ষের ফলে বস্তুদুটির মাঝের আয়নের সংখ্যা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এবং ক্রমশ বিপরীত তড়িৎগ্রস্থের বস্তুদুটি প্রশমিত হতে থাকে এবং তাদের মাঝে তড়িৎস্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। 

বায়ু তড়িৎপরিবহন করতে পারে না তার কারণ:
সাধারণ অবস্থায় বায়ুর মধ্যে সামান্য আয়ন ও তড়িৎগ্রস্থ অণু থাকলেও, কোনও মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। তাই বিপরীত তড়িৎগ্রস্থের দুটি বস্তুকে পরস্পর থেকে দূরে রাখলে ওই বস্তুদুটির মাঝের বায়ু তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না। কারণ সাধারণ চাপে বায়ুর অণুগুলি খুব কাছাকাছি থাকে, তাই ওই বিপরীত তড়িৎগ্রস্থ বস্তু দুটির মাঝে অনেক অণুর ভীড় থাকে। এর মধ্য কোনও আয়ন বা তড়িৎগ্রস্থ অণু এই তড়িৎক্ষেত্রের প্রভাবে, প্রভাবিত হয়ে কোনও নতুন আয়ন উৎপন্নের জন্য যে বেগ দরকার, তা অর্জন করার পূর্বেই অন্য কোনও অনুর সাথে সংঘাত ঘটে যায়, ফলে নিজের বেগ হারায়। তাই আর কোনও নতুন আয়ন বা তড়িৎগ্রস্থ পরমাণু উৎপন্ন হতে না। তাই সাধারন চাপে বায়ুর মধ্যে তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না।

বায়ু বা গ্যাস কোন্‌ অবস্থায় তড়িৎপরিবহন করে?
দুটি বিপরীত তড়িৎগ্রস্থ বস্তুদুটির মধ্যে যদি বায়ুর চাপ খুব কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ওই বস্তুদুটির মাঝে থাকা অণু বা আয়নের সংখ্যা অনেক কমে যায়, এবং অণুগুলির পারস্পরিক দূরত্ব (Inter-molecular distance) বেড়ে যায়।  এই অবস্থায় বস্তুদুটির মাঝে থাকা আয়ন বা অণুর সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে, ওই তড়িৎক্ষেত্রের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে অন্য কোনও অণু বা আয়নের সাথে সংঘর্ষের পূর্বেই যথেষ্ট বেগ অর্জন করে বিপরীত তড়িৎগ্রস্থ বস্তুটির দিকে ছুটে যায়। এই অবস্থায় কোনো নিস্তড়িৎ অণুর সাথে বা আয়নের সাথে সংঘর্ষ ঘটিয়ে আরও অনেক আয়ন বা তড়িৎগ্রস্থ অন্য সৃষ্টি করতে পারে। এই অবস্থায় দুটি তড়িৎগ্রস্থ বস্তুর মধ্যে বায়ুর মাধ্যমেই তড়িৎপরিবহন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। 
এখন এই বিপরীত তড়িৎগ্রস্থ বস্তুদুটির মধ্যকার বায়ুর চাপ ক্রমশ কমাতে থাকলে তড়িৎপরিবহণের ক্ষমতাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। কিন্তু একদম একদম খুব কমিয়ে দিলে অনু বা আয়নের সংখ্যা অত্যন্ত কমে গেলে আর তড়িৎপরিবহণ করতে পারে না। কারণ সেক্ষেত্রে নতুন আয়ন বা তড়িৎগ্রস্থ পরমাণু সৃষ্টি করার সুযোগ থাকে না। 

তড়িৎমোক্ষন (Electric discharge):
সাধারাণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাস তড়িতের অপরিবাহী। কিন্তু কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে বায়ু বা গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহ করার ঘটনাকে তড়িৎমোক্ষন বলে।
সাধারণ অবস্থায় বায়ু বা গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎমোক্ষন হয় না। কিন্তু কয়েকটি বিশেষ উপায়ের মাধ্যমে গ্যাসের মধ্যে আয়ন ও অনুগুলির মাধ্যমে তড়িৎপরিবহন করানো যায়। কয়েকটি বিশেষ উপায় এখানে উল্লেখ করা হল।
(1) গ্যাসকে খুব উত্তপ্ত করলে তাপীয় আয়নীভবন ঘটে গ্যাস আয়নিত হয়।
(2) গ্যাসের মধ্য দিয়ে অতিক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অতিবেগুনী রশ্মি, এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি ইত্যাদি পাঠিয়ে গ্যাসকে আয়নিত করা হয়।
(3) গ্যাস বা বায়ুর মধ্য দিয়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত শক্তিশালী আলফা কণা, বিটা কণা পাঠিয়ে গ্যাসকে আয়নিত করা যায়।
(4) গ্যাসকে খুব নিম্নচাপে রেখে গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎমোক্ষনের ব্যবস্থা করে গ্যাসকে আয়নিত করা যায়।

তড়িৎমোক্ষন নল (Discharge Tube):
Discharge Tude, Cathode Ray, Conductivity through gases
বায়ু বা গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎক্ষরণের জন্য একটি বিশেষ ধরণের কাঁচের তৈরি নল ব্যবহার করা হয়। এই নল প্রায়  \(30cm\) দৈর্ঘ্য এবং \(4cm\) ব্যাসের একটি শক্ত কাঁচের নল। এই নলের দুই মুখই বন্ধ থাকে এবং ওই দুইমুখ দিয়ে দুটি ধাতব তড়িৎদ্বার প্রবেশ করানো থাকে। নলের গায়ে একটি ছিদ্রের মাধ্যমে একটি পার্শ্বনল লাগানো থাকে। এই পার্শ্বনলটি একটি বায়ু-নিষ্কাশন পাম্পের সাথে যুক্ত থাকে যার মাধ্যমে নলের ভিতরকার বায়ুকে বের করে দেওয়া যায়। নলের দুইপ্রান্তের দুটি তড়িৎদ্বার  একটি্ উচ্চবিভব পার্থক্য (প্রায় \(10,000V\)) বিশিষ্ট আবেশকুন্ডলীর সাথে যোগ করা থাকে।

এখন তড়িৎমোক্ষন নলের পার্শ্বনলের সঙ্গে যুক্ত পাম্পের সাহায্যে নলের ভিতরকার গ্যাস ধীরে ধীরে কমাতে থাকলে নিম্নলিখিত ঘটনা গুলি দেখতে পাওয়া যায়।

(1) তড়িৎমোক্ষন নলের অভ্যন্তরের বায়ুর চাপ যখন প্রায়  \(1cm\) বা (\(1\) টর) হয়, তখন এক তড়িৎদ্বার থেকে অপর তড়িৎদ্বারের দিকে বেগুনী রঙের লম্বা স্ফুলিঙ্গ এঁকে-বেঁকে অগ্রসর হয় এবং তড়িৎমোক্ষনের চটপটি ফাটার মতো শব্দ শোনা যায়।
Discharge Through Gases, Cathode Ray, Sischarge Tube

(2) তড়িৎমোক্ষন নলের অভ্যন্তরের বায়ুর চাপ যখন প্রায় \(0.5cm\) বা (\(1\) টর) হয়, তখন তড়িৎমোক্ষনটি স্থায়ী হয়। এই নলের মধ্যে অবস্থিত বায়ুতে বেগুনী রঙের মোক্ষন ক্যাথোড ও অ্যানোডের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ করে। এই দীপ্তিমান আলোক স্তম্ভকে 'ধনাত্বক স্তম্ভ' (Positive column) বলা হয়। ক্যাথোডের খুব কাছের অঞ্চলে এই দীপ্তি দেখা যায় না। আলোকহীন এই অঞ্চলটিকে "ফ্যারাডের অন্ধকার অঞ্চল" (Faraday's dark region) বলে। ক্যাথোড সংলগ্ন খুব অল্প জায়গায় এক ধরনের হালকা নীলাভ দীপ্তি দেখা যায়। একে "ঋনাত্বক দীপ্তি" (Negative column) বলে। এই ঋনাত্বক দীপ্তি এবং ধনাত্বক স্তম্ভের মাঝখানে জায়গা জুড়ে থাকে "ফ্যারাডের অন্ধকার অঞ্চল"। 


(3) এরপর নলের ভিতরকার বায়ুর চাপ আরো কমিয়ে প্রায় \(0.1cm\) করা হলে, ঋনাত্বক দীপ্তি ক্যাথোডের তল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অ্যানোডের দিকে সরে আসে, এবং ধনাত্বক স্তম্ভের নিরবচ্ছিন্ন পটি ভেঙে অনেকগুলি আলোকচক্রের সমষ্টিতে পরিনত হয়। এই আলোকচক্র গুলির ফাঁকে ফাঁকে অন্ধকার স্থান থাকে। এব এই অবস্থায় ক্যাথোডের উপর হালকা নীলাভ দীপ্তি দেখা যায়। এটি "ঋনাত্বক দীপ্তি"
(4) এরপর নলের বায়ুর চাপ আরো কমিয়ে প্রায় \(0.01cm\) করা হলে, আলোক চক্রগুলির মাঝের ফাঁক ক্রমশ বাড়ে। এই সময় ঋনাত্বক দীপ্তি ও ক্যাথোডের মাঝে আর একটি অন্ধকার অঞ্চল সৃষ্টি হয়। একে "ক্রুকসের অন্ধকার অঞ্চল" বলে। এই অবস্থায় ক্যাথোডের গায়ে আর একটি গোলাপী দীপ্তি দেখা যায়। একে "ক্যাথোড দীপ্তি" বলে। 
(5) এখন গ্যাসের চাপ \(0.01cm\) অপেক্ষা আরও কম করা হলে ক্রুকস অঞ্চল ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে সমগ্র নলটিকে পূর্ণ করে। ফলে নলটি অন্ধকারাচ্ছন হয়ে যায়। এই সময় নলের মধ্যে তড়িৎমোক্ষন খুব কষ্টসাধ্য হয়। 
ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এই সময় ক্যাথোড থেকে একপ্রকার দ্রুতগতির আহিত কণা নির্গত হয়ে অ্যানোডের উপরে এবং কাঁচনলের গায়ে আপতিত হয়। ফলে কাঁচনলের গা থেকে নীলাভ প্রতিপ্রভ বিকিরণ (Fluorescent radiation) নির্গত হয়। ক্যাথোড থেকে নির্গত এই আহিত কণাকে "ক্যাথোড রশ্মি" বলে।

(6) এখন নলের মধ্যকার গ্যাসের চাপ \(0.00001cm\) করা হলে এবং দুইপ্রান্তের বিভব পার্থক্য খুব বেশী হলে নলের মধ্যে গ্যাসের অণুর সংখ্যা অনেক কমে যাওয়ার জন্য গ্যাসের মধ্য দিয়ে আর তড়িৎ পরিবহন হয় না। একে নলের মোক্ষনহীন অবস্থা বলে।

গ্যাসের মধ্যে তড়িৎমোক্ষন ঘটনার ব্যবহারিক প্রয়োগ:


(i) নিয়ন সাইন: বড় বড় দোকানে নিয়ন সাইন দিয়ে রাত্রে বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞাপন অনুযায়ী কাচের সরু নলকে বাঁকিয়ে বিভিন্ন অক্ষর তৈরি করে তার দুইপ্রান্তে তড়িৎদ্বার ঢুকিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর নলটিকে বায়ুশূন্য করে \(0.5cm\) চাপে কোনও গ্যাস ঢুকিয়ে উচ্চবিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে "ধনাত্বক স্তম্ভ" সৃষ্টি করা হয়। 
নিয়ন গ্যাস দ্বারা কাঁচনলটি ভর্তি করলে: লাল রঙ হয়
হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা কাঁচনলটি ভর্তি করলে: হলুদ রঙ হয়
সাধারণ বায়ু দ্বারা কাঁচনলটি ভর্তি করলে: গোলাপী রঙ হয়
হাইড্রোজেন গ্যাস দ্বারা কাঁচনলটি ভর্তি করলে: নীলাভ লাল রঙ হয়
কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস দ্বারা কাঁচনলটি ভর্তি করলে: নীলাভ সাদা রঙ হয়










(ii) সোডিয়াম ও পারদ বাষ্প: রাস্তা আলোকিত করার জন্য এবং বর্ণালী পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়।

(iii) ফ্লুওরেসেন্ট বাতি: এখানে আবদ্ধ তড়িৎমোক্ষন নলের অভ্যন্তরের দেওয়ালে বেরিয়াম অক্সাইডের প্রলেপ লাগানো থাকে ফলে তড়িৎমোক্ষনের সময় প্রচুর ইলেকট্রন নির্গত করে। এবার নলটিকে বায়ুশূন্য করে তার ভেতরে সামান্য আর্গন গ্যাস, নাইট্রোজেন গ্যাস ও পারদ বাষ্প রাখা থাকে। তড়িৎমোক্ষনে প্রথমে আর্গন ও নাইট্রোজেন গ্যাস বাতিটিকে সক্রিয় করে, পরে পারদ বাষ্পের মধ্য দিয়ে তড়িৎমোক্ষন হলে সাদা আলোর সৃষ্টি করে। এই জাতীয় বাতি বেশী আলো দেয়, ছায়া হয় না এবং উষ্ণতার সৃষ্টি করে না। 


  

গ্যাসের চাপ (cm)বিভিন্ন চাপে যা দেখা যায়
1 cmতড়িৎদ্বার দুটির মধ্যে লম্বা স্ফুলিঙ্গ এঁকে বেঁকে যায়। এবং তড়িৎক্ষরণের শব্দ শোনা যায়।
0.5 cmক্যাথোড থেকে অ্যানোড পর্যন্ত একটি বিস্তৃত আলোক স্তম্ভ সৃষ্টি হয়। একে ধনাত্বক স্তম্ভ বলে। এর বর্ণ বিভিন্ন গ্যাসে বিভিন্ন হয়।
0.1 cmঅনেকগুলি আলোকচক্রের সৃষ্টি হয়। আলোক চক্রগুলির মাঝে মাঝে অন্ধকার অঞ্চল থাকে। এবং ক্যাথোডের উপর একটি নীলাভ-বেগুনী দীপ্তির সৃষ্টি হয়। একে ক্যাথোড দীপ্তি বলে।
0.05 cmনেগেটিভ দীপ্তি ও ক্যাথোডের মাঝে ক্রুকস কৃষ্ণাচল সৃষ্টি হয়। ক্যাথোডের উপর একটি গোলাপী দীপ্তি সৃষ্টি হয়। একে ক্যাথোড দীপ্তি বলে।
0.01 cmক্রুকসের অন্ধকার অঞ্চল সমগ্র নলে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাথোডের বিপরীত দেওয়ালে প্রতিপ্রভার সৃষ্টি হয়। এবং ঋনাত্বক আধানের একধরণের কণিকা প্রবাহ ঘটতে থাকে। একে ক্যাথোড রশ্মি বলে।
0.001 cmতড়িৎমোক্ষন নলের অভ্যন্তরে গ্যাসের অণুগুলি খুবই কমে যাওয়ায় আর তড়িৎপ্রবাহ হয় না।

Sunday, May 1, 2016

Production of Cathode Ray, Its Properties & Discovery of Electron (ইলেকট্রন কণিকার আবিষ্কার)

May 01, 2016 0 Comments
পরমাণু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা:
যেকোনও মৌলের শেষ উৎস জানতে পরমাণুর ধারণা প্রথম কল্পনা করা হয় প্রায় খ্রীষ্টজন্মের কয়েক শতাব্দী পূর্বে (প্রায় \(500B.C.\) )। এই ব্যাপারে মহর্ষি কণাদকে পরমাণুর ধারণার পথিকৃৎ হিসাবে মনে করা হয়। তাঁর মতে পরমাণু হল "সদ্‌কান্বন্নিত্যম্‌"। এর অর্থ হল পরমাণু সদ্ (অস্থিত্ব আছে এমন কিছু), নিত্য (চিরন্তন, অক্ষয়, অখন্ডনীয়), এর উৎস বা কারণ নেই। এই বিরাট বিশ্বসংস্থিতির মধ্যে কণামাত্র স্থানে এর অবস্থান। অতি সূক্ষ, চোখে দেখা যায় না অথচ সমস্ত সৃষ্টির মূলে এই পরমাণু।
ঋষি কণাদের এই ধারণাতে অবাক হয়েছিলেন ডেমোক্রিটাস (Democritus), লিউপ্পাস (Leuappus) ইত্যাদি গ্রীক দার্শনিকগন। তাঁরা এই কণাগুলির নামকরণ করেছিলেন "atomos", যার অর্থ "not divisible"। এরপর বেশ কয়েক শতাব্দী কেটে যায়। কিন্তু পরমাণু সম্পর্কে কেউ কোনও ধারণা দিতে পারেনি। আর এই পরমাণুর চেয়ে ক্ষুদ্রতর কোনও কণার অস্থিত্বও জানা যায় নি।

পরমাণুর অস্থিত্ব সম্পর্কে প্রাচীন ধারণা:
এর পরে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন ডালটন বিভিন্ন রাসায়নিক সংযোগ সংক্রান্ত কয়েক দশক ধরে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে তিনি আভাস পেয়েছিলেন যে পরমাণুর অস্থিত্ব আছে এবং তারা একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যুক্ত হয় এবং বিযুক্ত হয়। অবশেষে তিনি 1808 খ্রীস্টাব্দে পরমাণুর বৈশিষ্ট্যগত একটি বাস্তবসম্মত তত্ত্বের উপস্থাপনা করেন, যা ডালটনের পরমাণুবাদ নামে খ্যাত। ডালটনের এই পরমাণুবাদই সর্বপ্রথম পরমাণুকে দার্শনিক তত্ত্ব থেকে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় নিয়ে আসে। 

ডালটনের পরমাণুবাদ:
(1) প্রত্যেক পদার্থ অসংখ্য অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত। এই কণাগুলির নাম হল পরমাণু বা অ্যাটম।
(2) একই মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলির আকার, আকৃতি, ভর ও রাসায়নিক ধর্মে একই হয়।
(3) বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলির আকার, আকৃতি, ভর ও রাসায়নিক ধর্মে আলাদা হয়।
(4) রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণুকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না।
(5) রাসায়নিক পরিবর্তনের সময় পরমাণুগুলি অখন্ড কণারূপে সরল অনুপাতে যুক্ত বা বিযুক্ত হয়ে যৌগিক পরমাণু (অণু) গঠন করে।
এরপর 1834 সালে মাইকেল ফ্যারাডে কিছু পদার্থের দ্রবনে তড়িৎচালনা করে দেখলেন যে পদার্থগুলির রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটছে। এর থেকে ধারণা পাওয়া গেল পদার্থের আধানগত কিছু বৈশিষ্ট্য আছে এবং পরমাণুর সঙ্গে এই আধান বা চার্জের নিশ্চই কোনও যোগসূত্র আছে। এই ধারণা যে সত্যি তা বুঝতে কেটে গেল আরও কিছু বছর।  ঊনিশ শতকের শেষ দিকে ক্যাথোড রশ্মির আবিষ্কারে প্রমানিত হল, পদার্থের পরমাণুর ভিতরে আরও ক্ষুদ্র কণা আছে।



ক্যাথোড রশ্মির আবিষ্কার:
বিজ্ঞানী প্লুকার (1858) ও গোল্ডস্টাইন (1876) ক্যাথোড রশ্মি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন। অবশেষে 1878 খ্রীষ্টাব্দে উইলিয়াম ক্রুকস 0.01 mm থেকে 0.001 mm বায়ুচাপে অতি উচ্চ বিভবপ্রভেদ (প্রায় 10, 000 ভোল্ট) প্রয়োগ করে তড়িৎমোক্ষণ নলে ক্যাথোড রশ্মি তৈরি করেন। 



তাঁর পরীক্ষার বিস্তারিত বিবরণ:
1878 খ্রীষ্টাব্দে বিজ্ঞানী উইলিয়াম ক্রুকস একটি তড়িৎমোক্ষন নলের (Discharge Tube) অভ্যন্তরে খুব কম চাপে (0.001 cm Hg) বায়ু রেখে ক্যাথোড এবং অ্যানোডের মধ্য উচ্চবিভবের D.C তড়িৎপ্রবাহ চালনা করেন। তিনি দেখেন যে ক্যাথোড থেকে একপ্রকার অদৃশ্য রশ্মি লম্বভাবে নির্গত হয়ে দ্রুত গতিতে অ্যানোডের দিকে যাচ্ছে। এবং অ্যানোডের চারিপাশের দেওয়ালে রঙিন প্রতিপ্রভার সৃষ্টি করছে। ক্যাথোড থেকেই এই রশ্মি নির্গত হয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে এই রশ্মির নাম দেওয়া হয়েছিল ক্যাথোড রশ্মি (Cathode Ray)।

এরপর বিজ্ঞানী জে. জে. থমসন (1897 খ্রীষ্টাব্দে) এবং স্টোনি এই ক্যাথোড রশ্মির উপর বিস্তৃত গবেষণা করেন। তাঁদের গবেষনায় ক্যাথোড রশ্মি থেকে যে যে বৈশিষ্ট্য বা তথ্যগুলি পাওয়া গিয়েছিল তা হল:

(1) ক্যাথোড রশ্মি সাধারণ আলোকরশ্মির মতো নয়, কিন্তু আলোর ন্যায় সরলরেখায় চলে। এই রশ্মির গতিপথে কোনও অস্বচ্ছ বস্তু রাখলে তার স্পষ্ট ছায়া তৈরি হয়।

(2) ক্যাথোড রশ্মির কণিকাগুলি ক্যাথোড পাতের অভিলম্বভাবে নির্গত হয়।

(3) ক্যাথোড রশ্মি কণা ধর্ম বা জাড্য ধর্ম দেখায়। এর গতিপথে অভ্রের পাতলা পাত দিয়ে তৈরি হালকা পাখা রাখলে, চাকাটি ঘুরতে থাকে।

(4) আলোকরশ্মির ন্যায় ক্যাথোডরশ্মি ফটোগ্রাফিক প্লেটকে প্রভাবিত করে।

(5) ক্যাথোড রশ্মির ভেদন ক্ষমতা আছে। এই রশ্মি অ্যালুমিনিয়াম, সোনা, টিন অভ্র ইত্যাদির পাতলা পাত ভেদ করে যেতে পারে।

(6) মোক্ষন নলের বাইরে পজিটিভ চার্জযুক্ত প্লেট রাখলে, ক্যাথোড রশ্মি ওই প্লেটের দিকে বেঁকে যায়। তাই বলা যায়, ক্যাথোড রশ্মি নেগেটিভ চার্জযুক্ত কণার স্রোত।

(7) ক্যাথোড রশ্মি চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়। 




মোক্ষন নলের ভিতরে কোন গ্যাস নেওয়া হয়েছে অথবা কোন্‌ ধাতুর ক্যাথোড নেোয়া হয়েছে তার উপর ক্যাথোড রশ্মির প্রকৃতি নির্ভর করে না। অর্থাৎ ক্যাথোড রশ্মির উপাদান কণিকা সব পদার্থের মধ্যেই আছে এবং এরা পরমাণুর অন্তর্গত সাব-অ্যাটমিক কণা। 

বিজ্ঞানী স্টোনি এই প্রাথমিক বা মৌল উপাদানটিকে প্রথম নাম দেন "ইলেকট্রন"। পরে বিজ্ঞানী মিলিক্যান এই ইলেকট্রনের আধানের মান ও ভর নির্ণয় করেন। এই ইলেকট্রন কণিকা আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানী জে. জে. থমসনকে 1906 সালে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়।