Follow Us @soratemplates

Wednesday, June 28, 2017

অ্যাসিড, ক্ষার, লবণ, নির্দেশক ও প্রশমন বিক্রিয়া

June 28, 2017 0 Comments

আরহেনিয়াসের আয়নীয় তত্ত্ব অনুযায়ী অ্যাসিডের সংজ্ঞা (Acid):
যে সমস্ত যৌগ জলীয় দ্রবণে আয়নিত হয়ে বা বিয়োজিত হয়ে শুধু মাত্র ক্যাটায়ন রূপে এক বা একাধিক \({H^ + }\) আয়ন উৎপন্ন করে, তাদের অ্যাসিড বলে। এই \({H^ + }\) আয়ন খুব অস্থায়ী। তাই একটি \({H^ + }\) আয়ন আবার একটি জলের অণুর (\({H_2}O\)) সঙ্গে যুক্ত হয়ে হাইড্রোক্সোনিয়াম আয়ন উৎপন্ন করে। তাই বলা যায়, যে সমস্ত যৌগ জলীয় দ্রবণে আয়নিত বা বিয়োজিত হয়ে ক্যাটায়ন রূপে হাইড্রক্সোনিয়াম (\({H_3}{O^ + }\)) আয়ন উৎপন্ন করে, তাদের অ্যাসিড বলে।

যেমন,
\(HCl \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} {H^ + } + C{l^ - }\)
\({H^ + } + {H_2}O = {H_3}{O^ + }\)

\({H_2}S{O_4} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} 2{H^ + } + S{O_4}^ = \)
\(2{H^ + } + 2{H_2}O = 2{H_3}{O^ + }\)

\(HN{O_3} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} {H^ + } + N{O_3}^ - \)
\({H^ + } + {H_2}O = {H_3}{O^ + }\)

\({H_2}C{O_3} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} 2{H^ + } + C{O_3}^ = \)
\(2{H^ + } + 2{H_2}O = 2{H_3}{O^ + }\)

\(C{H_3}COOH \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} {H^ + } + C{H_3}CO{O^ - }\)
\({H^ + } + {H_2}O = {H_3}{O^ + }\)

অ্যাসিডের সাধারণ বৈশিষ্ট্য:
1. অ্যাসিড মাত্রই জলীয় দ্রবণে আয়নিত হয়ে বা বিয়োজিত হয়ে কেবলমাত্র এক বা একাধিক ক্যাটায়ন রূপে \({H^ + }\) আয়ন উৎপন্ন করে যা পরে জলের একটি অণুর সাথে যুক্ত হয়ে হাইড্রক্সোনিয়াম (\({H_3}{O^ + }\)) আয়ন উৎপন্ন করে। যেমন,
\(HCl \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} {H^ + } + C{l^ - }\)
\({H^ + } + {H_2}O = {H_3}{O^ + }\)

\({H_2}S{O_4} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} 2{H^ + } + S{O_4}^ = \)
\(2{H^ + } + 2{H_2}O = 2{H_3}{O^ + }\)

\(HN{O_3} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} {H^ + } + N{O_3}^ - \)
\({H^ + } + {H_2}O = {H_3}{O^ + }\)

\({H_2}C{O_3} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} 2{H^ + } + C{O_3}^ = \)
\(2{H^ + } + 2{H_2}O = 2{H_3}{O^ + }\)

\(C{H_3}COOH \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} {H^ + } + C{H_3}CO{O^ - }\)
\({H^ + } + {H_2}O = {H_3}{O^ + }\)

2. অ্যাসিড সাধারণত জলে দ্রবণীয় এবং জলীয় দ্রবণে অম্ল বা টক স্বাদযুক্ত

3. অ্যাসিডের জলীয় দ্রবণ নীল লিটমাসকে লাল করে এবং মিথাইল অরেঞ্জের কমলা বর্ণকে লাল বর্ণে পরিণত করে।

4. হাইড্রোজেনের চেয়ে বেশি তড়িৎধনাত্বক ধাতু যেমন, জিঙ্ক (\(Zn\)), ম্যাগনেশিয়াম (\(Mg\)), আয়রণ (\(Fe\)) ইত্যাদি ধাতুর সঙ্গে অ্যাসিডের প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন গ্যাস (\({H_2} \uparrow \)) নির্গত করে। যেমন,
\(Zn + 2HCl = ZnC{l_2} + {H_2} \uparrow \)
\(Zn + {H_2}S{O_4} = ZnS{O_4} + {H_2} \uparrow \)
\(Fe + 2HCl = FeC{l_2} + {H_2} \uparrow \)
\(Mg + 2HN{O_3} = Mg{\left( {N{O_3}} \right)_2} + {H_2} \uparrow \)

5. অ্যাসিড ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রক্সাইডের (ক্ষার) সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে। যেমন,
\(NaOH + HCl = NaCl + {H_2}O\)
\(NaOH + {H_2}S{O_4} = N{a_2}S{O_4} + {H_2}O\)
\(CaO + 2HCl = CaC{l_2} + {H_2}O\)
\(MgO + {H_2}S{O_4} = MgS{O_4} + {H_2}O\)

6. অ্যাসিড ধাতব কার্বনেট বা বাইকার্বনেট লবনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে। যেমন,
\(N{a_2}C{O_3} + 2HCl = 2NaCl + C{O_2} \uparrow + {H_2}O\)
\(NaHC{O_3} + HCl = NaCl + C{O_2} \uparrow + {H_2}O\)

অ্যাসিডের সনাক্তকরণ
1. অ্যাসিডে নীল লিটমাস পেপার লাল হয়ে যায় এবং মিথাইল অরেঞ্জের কমলা বর্ণ লাল হয়ে যায়।
2. কার্বনেট বা বাইকার্বনেট লবণে কয়েক ফোঁটা অ্যাসিড যোগ করলেই বুদবুদ সৃষ্টি করে কার্বন ডাইঅক্সাইড (\(C{O_2} \uparrow \)) গ্যাস নির্গত করে যা স্বচ্ছ চুনজলকে ঘোলা করে দেয়।
3. লঘু যেকোনো অ্যাসিডের সঙ্গে ম্যাগনেশিয়াম বা জিঙ্ক ধাতু যোগ করলে বর্ণহীন, গন্ধহীন হাইড্রোজেন গ্যাস (\({H_2} \uparrow \)) উৎপন্ন করে যার মধ্যে জ্বলন্ত পাটকাঠি প্রবেশ করালে, পাটকাঠিটি নিভে যায় কিন্তু গ্যাসটি নীল শিখায় জ্বলে।

এই প্রমাণগুলির দ্বারা বোঝা যায় যৌগটি একটি অ্যাসিড।

ক্ষারক (Bases):
যে সমস্ত ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রক্সাইড অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবন ও জল উৎপন্ন করে, তাদের ক্ষারক বলে।
যেমন, ক্যালশিয়াম অক্সাইড (\(CaO\)), ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড (\(MgO\)), সোডিয়াম মনোক্সাইড (\(N{a_2}O\)), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(NaOH\)), ক্যালশিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(Ca{\left( {OH} \right)_2}\)), অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(Al{\left( {OH} \right)_3}\)) ইত্যাদি।

\(CaO + 2HCl = CaC{l_2} + {H_2}O\)
\(NaOH + HCl = NaCl + {H_2}O\)
\(MgO + 2HCl = MgC{l_2} + {H_2}O\)
\(CuO + 2HN{O_3} = Cu{\left( {N{O_3}} \right)_2} + {H_2}O\)
\(Al{\left( {OH} \right)_3} + 3HCl = 2AlC{l_3} + 3{H_2}O\)

ক্ষারকের কিছু ব্যতিক্রম:
1. অধিকাংশ ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রক্সাইড ক্ষারক হলেও, কিছু কিছু ধাতুর অক্সাইড ক্সারক নয়। যেমন, ম্যাঙ্গানিজের অক্সাইডগুলি হল \(MnO\), \(M{n_2}{O_3}\), \(M{n_3}{O_4}\)। এদের মধ্যে \(MnO\) এবং \(M{n_2}{O_3}\) ক্ষারক হলেও \(M{n_3}{O_4}\) ক্ষারক নয়।

2. আবার কিছু কিছু যৌগ আছে যারা ধাতব অক্সাইড বা ধাতব হাইড্রক্সাইড নয়। কিন্তু তাদের মধ্যে ক্ষারকধর্ম বর্তমান। যেমন, সোডিয়াম কার্বনেট (\(N{a_2}C{O_3}\)), সোডিয়াম বাইকার্বনেট (\(NaHC{O_3}\)) যৌগদুটি আসলে লবন। তবুও এরা অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবন, জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইড (\(C{O_2} \uparrow \)) গ্যাস উৎপন্ন করে।

3. অ্যামোনিয়া (\(N{H_3}\)) ধাতব অক্সাইড বা ধাতব হাইড্রক্সাইড নয়। অ্যামোনিয়া (\(N{H_3}\)) অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবন ও জলও উৎপন্ন করে না। কিন্তু জলীয় দ্রবণে অ্যামোনিয়া, অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(N{H_4}OH\)) উৎপন্ন করে যা আয়নে বিয়োজিত হয়ে অ্যানায়নরূপে \(O{H^ - }\) আয়ন দেয়। সেইজন্য অ্যামোনিয়াকে (\(N{H_3}\)) ক্ষারক বলা হয়।
\(N{H_3} + HCl = N{H_4}Cl\)
\(N{H_3} + {H_2}O = N{H_4}OH\)

4. কিছু কিছু জৈব যৌগ আছে, যাদের মধ্যে ক্ষারকের ধর্ম বর্তমান। অথচ এরা ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রক্সাইড নয়। যেমন, মিথাইল অ্যামিন (\(C{H_3}N{H_2}\)), অ্যানিলিন (\({C_6}{H_5}N{H_2}\)) ইত্যাদি।

ক্ষার (Alkali):
যেসমস্ত ক্ষারকধর্মী ধাতব অক্সাইড বা ধাতব হাইড্রক্সাইড জলে দ্রাব্য, তাদের ক্ষার (Alkali) বলে:
যেমন, ক্যালশিয়াম অক্সাইড (\(CaO\)), ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড (\(MgO\)), সোডিয়াম মনোক্সাইড (\(N{a_2}O\)), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(NaOH\)), পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(KOH\)), ক্যালশিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(Ca{\left( {OH} \right)_2}\)) ইত্যাদি ধাতব অক্সাইড বা ধাতব হাইড্রক্সাইড গুলি জলে দ্রাব্য। তাই এরা ক্ষার (Alkali)। আবার ক্ষারকও বটে। কিন্তু
অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(Al{\left( {OH} \right)_3}\)), জিঙ্ক হাইড্রক্সাইড (\(Zn{\left( {OH} \right)_2}\)), ফেরিক হাইড্রক্সাইড (\(Fe{\left( {OH} \right)_3}\)), জিঙ্ক অক্সাইড (\(ZnO\)), ফেরিক অক্সাইড (\(FeO\)) এরা জলে দ্রবীভূত হতে পারে না। তাই এরা ক্ষারক হলেও ক্ষার নয়।

আরহেনিয়াসের আয়নীয়তত্ত্ব অনুযায়ী ক্ষারের সংজ্ঞা:
যে সমস্ত যৌগ জলীয় দ্রবণে আয়নিত হয়ে বা বিয়োজিত হয়ে অ্যানায়ন রূপে কেবলমাত্র হাইড্রক্সিল আয়ন \(O{H^ - }\) উৎপন্ন করে, তাদের ক্ষার (Alkali) বলে।
যেমন,
\(CaO + {H_2}O = Ca{\left( {OH} \right)_2}\), \(Ca{\left( {OH} \right)_2} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} C{a^{ + + }} + 2O{H^ - }\)
\(MgO + {H_2}O = Mg{\left( {OH} \right)_2}\), \(Mg{\left( {OH} \right)_2} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} M{g^{ + + }} + 2O{H^ - }\)
\(N{a_2}O + {H_2}O = 2NaOH\), \(NaOH \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} N{a^ + } + O{H^ - }\)
\(NaOH \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} N{a^ + } + O{H^ - }\)
\(KOH \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} {K^ + } + O{H^ - }\)

ক্ষারের সাধারণ বৈশিষ্ট্য:
1. ক্ষারমাত্রই জলীয় দ্রবণে আয়নিত হয়ে বা বিয়োজিত হয়ে অ্যানায়ন রূপে কেবলমাত্র হাইড্রক্সিল (\(O{H^ - }\)) উৎপন্ন করে।
যেমন,
\(CaO + {H_2}O = Ca{\left( {OH} \right)_2}\), \(Ca{\left( {OH} \right)_2} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} C{a^{ + + }} + 2O{H^ - }\)
\(MgO + {H_2}O = Mg{\left( {OH} \right)_2}\), \(Mg{\left( {OH} \right)_2} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} M{g^{ + + }} + 2O{H^ - }\)
\(N{a_2}O + {H_2}O = 2NaOH\), \(NaOH \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} N{a^ + } + O{H^ - }\)
\(NaOH \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} N{a^ + } + O{H^ - }\)
\(KOH \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} {K^ + } + O{H^ - }\)

2. ক্ষার জলে দ্রবনীয় এবং জলীয় দ্রবণে পিচ্ছিল হয়।

3. ক্ষারের জলীয় দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল করে।

4. ক্ষার, অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে। যেমন,
\(HCl + NaOH = NaCl + {H_2}O\)
\(MgO + 2HCl = MgC{l_2} + {H_2}O\)
\(Ca{\left( {OH} \right)_2} + 2HCl = CaC{l_2} + 2{H_2}O\)
\(Fe{\left( {OH} \right)_3} + 3HCl = FeC{l_3} + 3{H_2}O\)

5. ক্ষার, ধাতব লবনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে, ধাতুটির হাইড্রক্সাইড যৌগ উৎপন্ন করে। যেমন,
\(CuC{l_2} + 2NaOH = 2NaCl + Cu{\left( {OH} \right)_2}\)

ক্ষারের সনাক্তকরণ:
1. ক্ষারের জলীয় দ্রবণে দু-তিন ফোঁটা লাল লিটমাস দ্রবণ যোগ করলে, দ্রবণটি নীল বর্ণের হয়ে যায়।
2. ক্ষারের দ্রবণে দু-তিন ফোঁটা ফেনলপথ্যালিন যোগ করলে, দ্রবণের বর্ণ গোলাপী হয়ে যায়।

এই প্রমানগুলি দ্বারা বোঝা যায়, যৌগটি একটি ক্ষার।

জল ভিন্ন অপর কোনো দ্রাবকে অ্যাসিড ও ক্ষার সংক্রান্ত বিষয়ে আরহেনিয়াসের আয়নীয় তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা:
অ্যাসিড ও ক্ষার বিষয়ে আরহেনিয়াসের আয়নীয় তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা:
পদার্থের জলীয় দ্রবণ ছাড়া আরহেনিয়াসের অ্যাসিড-ক্ষার সংক্রান্ত আয়নীয়তত্ত্ব প্রযোজ্য হয় না:

1. আরহেনিয়াসের আয়নীয় তত্ত্ব অনুযায়ী অ্যাসিড এবং ক্ষারগুলিকে সনাক্ত করতে তাদের জলীয় মাধ্যমের প্রয়োজন। জলীয় মাধ্যম ছাড়া অ্যাসিড ও ক্ষারের ধর্ম ব্যাখ্যা করা যায় না।

2. জল ভিন্ন অন্য কোনো অজলীয় দ্রাবকে যৌগের অ্যাসিড বা ক্ষার ধর্ম এই তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায় না। যেমন,
(i) তরল অ্যামোনিয়া দ্রাবকে দ্রবীভূত অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (\(N{H_4}Cl\)) অ্যাসিডের ন্যায় আচরণ করে।
(ii) তরল অ্যামোনিয়া দ্রাবকে দ্রবীভূত সোডামাইড (\(NaN{H_2}\)) ক্ষারের ন্যায় আচরণ করে।

3. হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (\(HCl\)), নাইট্রিক অ্যাসিড (\(HN{O_3}\)) ইত্যাদি জলীয় দ্রবণে ক্যাটায়ন রূপে কেবলমাত্র \({H^ + }\) আয়ন দেয়। কিন্তু জল ভিন্ন অপর দ্রাবকে এই অ্যাসিডগুলি \({H^ + }\) আয়ন দেয় না। যেমন, তরল অ্যামোনিয়াতে, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (), \(N{H_4}^ + \) আয়ন দেয়।
\(N{H_3}\left( l \right) + HCl = N{H_4}Cl\)
\(N{H_4}Cl \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} N{H_4}^ + + C{l^ - }\)

তাই বলা যায়, অ্যাসিড-ক্ষার সংক্রান্ত আরহেনিয়াসের আয়নীয় তত্ত্বটি কেবলমাত্র ওই পদার্থগুলির জলীয় দ্রবণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। জল ছাড়া অন্য কোনো দ্রাবকে এই আরহেনিয়াসের আয়নীয় তত্ত্বটি প্রায় প্রযোজ্য হয় না।

লবণ (Salt):
লবণ (Salt): অ্যাসিডের প্রতিস্থাপনযোগ্য হাইড্রোজেন পরমাণু, ধাতু বা ধাতুধর্মী মূলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন করে, তাদের লবণ বলে।

Tuesday, June 27, 2017

জল (Water): নবম শ্রেণি [West Bengal Board of Secondary Education]

June 27, 2017 0 Comments
  • Water Purifire, Water Pollution, Class: IX, Water
[Question: 1] জলের কোন্‌ কোন্‌ ভৌতধর্ম প্রাণের বিকাশে ও প্রাণধারণে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করো।
[Question: 2] পানীয় জলের কোন্‌ কোন্‌ গুণ থাকা আবশ্যক?
[Question: 3] পানীয় জলের গুণগত মান কোন্‌ কোন্‌ বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
[Question: 4] কলিফর্ম কাউন্ট বলতে কী বোঝায়?
[Question: 5] স্ফুটন পদ্ধতির সাহায্যে কীভাবে পানীয় জল থেকে রোগজীবাণু মুক্ত করা হয়? এই পদ্ধতির অসুবিধাগুলি কি কি?
[Question: 6] ক্লোরিনেশান পদ্ধতির সাহায্যে কীভাবে পানীয় জল থেকে রোগজীবাণু মুক্ত করা হয়? এই পদ্ধতির অসুবিধাগুলি কি কি?
[Question: 7] অতিবেগুনী রশ্মির সাহায্যে কীভাবে পানীয় জল থেকে রোগজীবাণু মুক্ত করা হয়? এই পদ্ধতির অসুবিধাগুলি কি কি?
[Question: 8] পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের সাহায্যে কীভাবে পানীয় জলকে পরিশোধন করা হয়?
[Question: 9] ওজোন গ্যাসের সাহায্যে কীভাবে পানীয় জলকে পরিশোধন করা হয়?
[Question: 10] ব্লিচিং পাউডারের সাহায্যে কীভাবে পানীয় জলকে পরিশোধন করা হয়?
[Question: 11] পাতন পদ্ধতির সাহায্যে কীভাবে জলকে পরিশোধন করা হয়?


জলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভৌতধর্ম যা আমাদের প্রাণধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে (Some Physical Properties of Water that Influenced Proliferation and Maintenance of Life):
(1) জলের উচ্চ আপেক্ষিক তাপ (High Specific Heat Capacity of Water):
(2) জলের উচ্চ স্ফুটনাঙ্ক ও নিম্ন হিমাঙ্ক (High Boiling Point & Low freezing Point of Water):
(3) কৈশিক ক্রিয়া (Capilary Action of Water):
(4) জলের দ্রাবক ধর্ম (Versatile Solvent of Water):
(5) জলের সান্দ্রতা ও পৃষ্ঠটান উচ্চ (High Viscosity & Surface Tension):


উপরিউক্ত ধর্মগুলিকে নীচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:
(1) জলের উচ্চ আপেক্ষিক তাপ (High Specific Heat Capacity of Water):জলের আপেক্ষিক তাপ \(1cal.{g^{ - 1}}.^\circ {C^{ - 1}}\) অথবা \(4200Joule.k{g^{ - 1}}.^\circ {C^{ - 1}}\)। জলের এই উচ্চ আপেক্ষিক তাপ হওয়ায়, জল গরম হওয়ার পূর্বে প্রচুর পরিমানে তাপ গ্রহন করে আবার যখন ঠান্ডা হয় তখন খুব ধীরে ধীরে জল তাপশক্তি বর্জন করে। তাই এই জলের আপেক্ষিক তাপ বেশি হওয়ায় বিভিন্ন ইঞ্জিন ও যন্ত্র শীতল করতে ব্যবহার করা হয়। সেঁক দেওয়ার কাজে গরম জলের বোতল ব্যবহার করা হয়। আবার জলের আপেক্ষিক বেশি হওয়ায়, জল স্থল অপেক্ষা ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়, আবার যখন তাপ বর্জন করে ধীরে ধীরে শীতল হয়। এই কারণে সমুদ্রের তীরে স্থলবায়ু ও সমুদ্র বায়ু সৃষ্টি হয়। ফলে সমুদ্রে বা হ্রদে যেখানে অতিরিক্ত জল থাকে সেখানে একটি প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষিত হয়। তাই জলের আপেক্ষিক তাপ উচ্চ হওয়ায় এবং বাষ্পীভবনের লীনতাপের মান উচ্চ হওয়ায় বায়ুমন্ডল ও দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে জল একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

(2) জলের উচ্চ স্ফুটনাঙ্ক ও নিম্ন হিমাঙ্ক (High Boiling Point & Low Freezing Point):প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে জলের স্ফুটনাঙ্ক \(100^\circ C\) এবং হিমাঙ্ক \(0^\circ C\)। তাই জলের এই বিস্তীর্ণ পাল্লায় (\(0^\circ C - 100^\circ C\)) জল তরল অবস্থায় থেকে জীবের প্রয়োজন মেটায়। আবার জলের বাষ্পীভবনের লীনতাপ \(540cal/gm\) এবং ঘনীভবনের লীনতাপ \(80cal/gm\)। তাই অবস্থার পরিবর্তনে লীনতাপের মান উচ্চ হওয়ায় শীতপ্রধান দেশে জল সহসা বরফ হয় না। তরল অবস্থায় বিস্তৃতি আর অন্য কোনো দ্রাবকের নেই।

(3) কৈশিক ক্রিয়া (Capilary Action of Water):কোনো কৈশিক নলকে (Capilary Tube) কোনো তরলের মধ্যে সোজা রাখলে কিছুটা তরল ওই কৈশিক নলের মধ্যে প্রবেশ করে এবং অভিকর্ষের বিপরীতে ওই নলের মধ্য দিয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে। এই কৈশিক ক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভিদেরা শেকড়ের মাধ্যমে মাটি থেকে খনিজ লবণ মিশ্রিত জল শোষণ করে এবং পাতায় পাতায় পৌঁছে দেয় এবং খাদ্য তৈরি করে।

(4) জলের দ্রাবক ধর্ম (Versatile Solvent of Water):(i) জল (\(0^\circ C - 100^\circ C\)) পর্যন্ত এই বিস্তীর্ণ পাল্লায় তরল অবস্থায় থাকে।
(ii) জল একটি উত্তম ধ্রুবীয় দ্রাবক (Polar Solvent)। জলের এই ধ্রুবীয়তার জন্য অধিকাংশ তড়িৎযোজী যৌগ, যেমন, \(NaCl\), \(KCl\), \(KN{O_3}\), \(CaC{l_2}\) ইত্যাদি পদার্থ জলে দ্রবীভূত হয়। জলের অণুর ঋনাত্বক প্রান্ত, তড়িৎযোজী যৌগের ধনাত্বক আয়নকে এবং জলের অণুর ধনাত্বক প্রান্ত, তড়িৎযোজী যৌগের ঋনাত্বক আয়নকে আকর্ষণ করে। ফলে আয়নগুলি তার বিপরীত আয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্রবীভূত হতে পারে।
(iii) চিনি, সাধারণ লবণ ইত্যাদি কঠিন পদার্থ, বিভিন্ন অ্যাসিড ও অ্যালকোহল ইত্যাদি তরল আবার বায়ু,\({O_2}\), \(C{O_2}\) ইত্যাদি গ্যাসীয় পদার্থ জলে দ্রবীভূত হতে পারে।
(iv) জল একটি অজৈব যৌগ হওয়া সত্ত্বেও জলে অনেক জৈবযৌগ যারা সাধারণত সমযোজী (চিনি, গ্লুকোজ, ইউরিয়া, অ্যালকোহল) ইত্যাদি দ্রবীভূত হতে পারে।
(v) জলে বিভিন্ন অ্যাসিড ও ক্ষার দ্রবীভূত হতে পারে।
(vi) এছাড়া জল সহজলভ্য।
সুতরাং দেখা যায়, জল দ্রাবক হিসাবে ব্যবহার ব্যাপক ও সার্বজনীন।

(5) জলের সান্দ্রতা ও পৃষ্ঠটান (High Viscosity & Surface Tension of Water):জলের সান্দ্রতা (Viscosity) ও পৃষ্ঠটান (Surface Tension) যথেষ্ট উচ্চ। এইজন্য জলের স্বাভাবিক বহমানতা বজায় থাকে।

(6) জলের ব্যতিক্রমী ঘনত্ব (Exceptional Density of Water): \(4^\circ C\) উষ্ণতায় জলের ঘনত্ব\(1gm/cc\)। অন্য যেকোনো বেশি বা কম তাপমাত্রায় জলের ঘনত্ব এর চেয়ে কম হয়। সাধারণত তাপমাত্রা কমালে সমস্ত তরলের আয়তন কমে এবং ঘনত্ব বাড়ে। কিন্তু জলের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা কমালে ঘনত্ব কমে। ফলে ওজনে হালকা হয়। তাই বরফের ঘনত্ব জলের চেয়ে কম হয়। তাই শীতপ্রধান দেশে হ্রদ বা জলাশয়ে শুধুমাত্র জলের উপরিতল বরফে পরিনত হয় কিন্তু তলদেশের জল তরলই থাকে। তাই এই বরফ ভেসে থাকার জন্য এখানে বরফ তাপীয় অন্তরক হিসাবে কাজ করে এবং জলজ প্রাণীরা জলের তলদেশে বেঁচে থাকতে পারে। এই বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষায় জলের এই ধর্মের ভূমিকা অপরিসীম।

পানীয় জলের আবশ্যকীয় গুন (Quality Parameter of Drinking Water):
প্রাণের বিকাশে ও প্রাণধারণে জল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানের যোগ্য জলই হল পানীয় জল। পানীয় জলের আবশ্যকীয় গুণাবলীগুলি হল: -
(1) পানীয় জল বর্ণহীন, গন্ধহীন, পরিষ্কার ও স্বচ্ছ হওয়া উচিত।
(2) পানীয় জল হলে সম্পূর্ণ রোগ জীবাণুমুক্ত।
(3) পানীয় জলে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া না থাকাই ভালো। তবে \(100ml\) জলে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া বা ই-কোলাই এর সংখ্যা যেন কখনো \(50\) এর বেশি না হয়।
(4) পানীয় জলের pH এর মান \(6.5 - 8.5\) এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।
(5) পানীয় জলে যেন কোনো প্রলম্বিত বা ভাসমান পদার্থ বা দ্রবীভূত অশুদ্ধি না থাকে।
(6) পানীয় জলে ক্ষতিকারক বিভিন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থ, কপার বা লেডের মতো বিষাক্ত লবণ, অতিরিক্ত পরিমাণে খাদ্য লবণ যেন পানীয় জলে না থাকে।
(7) সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি ধাতুর লবনগুলি আমাদের শরীরের পক্ষে উপকারী। তাই এই লবনগুলি জলে উপযুক্ত পরিমানে দ্রবীভূত থাকা আবশ্যক।
(8) পানীয় জলে বিষাক্ত ক্লোরাইড, ফ্লুওরাইড, আর্সেনাইট, আর্সেনেট যৌগ, নাইট্রেট, অ্যামোনিয়া এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া যেন না থাকে।
(9) \(C{O_2}\) জলে সুস্বাদু করে এবং স্বাস্থ্যরক্ষায় সাহায্য করে, তাই জলে \(C{O_2}\) দ্রবীভূত থাকা উচিত।
(10) পানীয় জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ (Dissolved Oxygen) যেন \(6mg/litre\) এর বেশি হওয়া প্রয়োজন। জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণীর স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য D.O. এর মাত্রা \(4 - 6mg/litre\) হওয়া উচিত। এই D.O. এর মান যত বেশি হবে তত ভালো বা তত বিশুদ্ধ হয়।
(11) পানীয় জলের উষ্ণতা স্বাভাবিক থাকা উচিত।


পানীয় জলের গুণগত মান নির্ধারক কিছু উপাদান:
পানীয় জলের গুনগত মান মুলত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
(1) ভৌত উপাদান:পানীয় জলে যেন কোনো ভাসমান বা প্রলম্বিত অবস্থায় কঠিন পদার্থ না থাকে। এবং জলের উষ্ণতা স্বাভাবিক থাকা প্রয়োজন।

(2) রাসায়নিক উপাদান:পানীয় জলে ক্ষতিকারক বিভিন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থ, কপার ও লেডের মতো বিষাক্ত ধাতুর লবন, বিষাক্ত ক্লোরাইড, ফ্লুওরাইড, নাইট্রেট, নাইট্রাইট, আর্সেনাইট, আর্সেনেট যৌগ যেন না থাকে।

(3) অণুজীব উপাদান:জলের মধ্যে বিভিন্ন রোগজীবাণু মিশে থাকলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই বিভিন্ন ধরণের কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া, E-Coli, ভিব্রিও কলেরি, পরজীবি প্রোটোজোয়া ইত্যাদি যেন জলের মধ্যে না থাকে। 
[vtab] [content title="দ্রবীভূত অক্সিজেন (D.O.)"] বায়ুমন্ডল থেকে যে অক্সিজেন জলে দ্রবীভূত থাকে, তাকে দ্রবীভূত অক্সিজেন বলে। পানীয় জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা হওয়া উচিত \(0^\circ C\) উষ্ণতায় \(30ml/1000ml\)। তাপমাত্রা বাড়লে এর পরিমান কমে যায়। স্বাভাবিকভাবেই "দ্রবীভূত অক্সিজেন (D.O.)" এর পরিমান কমে গেলে জল দূষিত হয়ে পড়ে। এবং পানের অযোগ্য হয়ে ওঠে। এছাড়াও, জলের মধ্যে থাকা জলজ উদ্ভিদ, শৈবালদের জন্ম, বৃদ্ধি, বিভিন্ন জৈব পদার্থ ও জীবাণুর বিয়োজন ইত্যাদি রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জল শোধিত হয়। এই প্রাকৃতিক ক্রিয়ার জন্য জলের মধ্যে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোনোভাবে জলদূষণের ফলে যদি জলে শৈবাল বা আগাছা বৃদ্ধি পায়, তবে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন বা D.O. এর পরিমাণ কমে যায়।[/content] [content title="B.O.D"] কোনো দূষিত জলের প্রতি লিটারে উপস্থিত জৈব দূষকের বিয়োজনের জন্য যত মিলিগ্রাম অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, সেই সংখ্যাকে বলা হয় জৈব রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা বা (B.O.D)[/content] [content title="C.O.D"] কোনো দূষিত জলে উপস্থিত বিয়োজন যোগ্য ও বিয়োজন অযোগ্য দূষকের জারণের জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, তাকে বলে রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা বা (C.O.D)[/content] [/vtab]
জল পরিশোধন ও পানীয় জল প্রস্তুতি (Purification of Water for Drinking Purpose):
পানীয় জল সাধারণত দুটি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। (i) ভূ-নিম্নস্থ জল (ii) নদী, হ্রদ ও বিভিন্ন জলাশয়ের জল। এদের মধ্যে ভূ-নিম্নস্থ জল সাধারণত পরিশোধন করার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু নদী, হ্রদ ও জলাধারের জলকে পানীয় জলে পরিণত করার জন্য পরিশোধন করা প্রয়োজন। এই পরিশোধন প্রক্রিয়া তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রাকৃতিক জলে সাধারণত তিনধরণের অশুদ্ধি মিশ্রিত থাকে।
(1) ভাসমান পদার্থ
(2) কলয়েড পদার্থ
(3) রোগ জীবাণু, আর্সেনিক, ফ্লুওরাইড ইত্যাদি যৌগ:


ভাসমান পদার্থের অপসারণ:
(i) নদী বা পুকুরের জলকে পাম্পের সাহায্যে বড়ো ট্যাঙ্কে তোলা হয়। সেই জলে প্রয়োজন মতো ফটকিরি ও সোডালাইম মেশানো হয়। ফলে এই রাসায়নিক পদার্থগুলি বিক্রিয়াগুলি করে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(Al{\left( {OH} \right)_3}\)) উৎপন্ন করে।
(ii) এরপর এই জকলে অধঃক্ষেপন ট্যাঙ্কের মধ্যে পাম্প করে পাঠানো হয় এবং কিছুক্ষণ রেখে দিলে ভাসমান অপদ্রব্য, কাদামাটি, সূক্স বালুকণা, ব্যাকটেরিয়া ও অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(Al{\left( {OH} \right)_3}\)) তলায় থিতিয়ে পড়ে।
(iii) এবার এই জলকে ফিল্টার বেডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে ফিল্টার করা হয়। ফিল্টার বেডের সবচেয়ে উপরে মিহি বালি, তার নীচে মোটা বালি, তার নীচে কাঠকয়লা, তার নীচে সূক্ষ নুড়ি এবং নীচে কাঁকর এবং সবচেয়ে নীচে থাকে নুড়িপাথরের স্তম্ভ।
(iv) বিভিন্ন স্তরের এই ফিল্টার বেডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরিস্রুত জল নীচের চৌব্বাচায় জমা হয়।


কলয়েডীয় পদার্থের অপসারণ:
(i) এই প্রাকৃতিক জলের সাথে মিশ্রিত বিভিন্ন কোলয়েডীয় অপদ্রব্য অপসারণ করার জন্য জলের সাথে ফটকিরি, অ্যালুমিনিয়াম সালফেট, সোডিয়াম অ্যালুমিনেট ইত্যাদি পদার্থ যোগ করা হয়। এর ফলে কলয়েড কণাগুলি অধঃক্ষিপ্ত হয়।
(ii) এই অধঃক্ষিপ্ত কলয়েড জল বালি-ফিল্টারের মধ্য দিয়ে পাঠিয়ে পরিস্রাবন করা হয়। প্রক্রিয়াটি বড়ো আকারের লোহার ট্যাঙ্কে ঘটানো হয়। এবং পরিস্রুত জল একটি বড়ো ট্যাঙ্কে সংগ্রহ করা হয়।


রোগজীবাণু দূরীকরণ:
উপরের দুটি পদ্ধতিতে পরিস্রুত জল স্বচ্ছ হলেও রোগজীবাণু মুক্ত হয় না। ক্ষতিকারক রোগজীবাণু থেকে যায়। তাই এই জলকে পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করতে গেলে এবার রোগজীবাণু মুক্ত করতে হয়। এই পরিস্রুত জল থেকে রোগজীবাণু মুক্ত করার জন্য (1) স্ফুটন (2) ক্লোরিনেশান (3) ব্লিচিং পাউডার (4) ওজোন (5) পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট অথবা (6) ওই জলের মধ্য দিয়ে অতিবেগুনী রশ্মি পাঠিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। তারপর সেই জলকে পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

(1) স্ফুটন পদ্ধতিতে রোগজীবাণু মুক্তকরণ: স্বাভাবিক বায়ুমন্ডলীয়চাপে জলের স্ফুটনাঙ্ক \(100^\circ C\)। কিন্তু বেশিরভাগ রোগজীবাণু \(60^\circ C\) এর থেকে বেশি উষ্ণতায় বাঁচে না। তাই স্ফুটনের সাহায্যে জল থেকে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুকে ধ্বংস করা যায় এবং তাকে একবার পরিশ্রুত করে নিলেই জীবাণুমুক্ত জল পাওয়া যায়।

স্ফুটন পদ্ধতিতে জলের রোগজীবাণু মুক্তকরণের অসুবিধা:
(i) এই পদ্ধতির প্রধান অসুবিধা হল যে, এতে কোনো বাড়তি বা অতিরিক্ত রোগজীবাণুনাশক না থাকার জন্য স্ফুটনের পর জল বেশিদিন রাখলে তা াবার নতুন রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
(ii) জলের মধ্যে \(100^\circ C\) এর চেয়ে বেশি স্ফুটনাঙ্কের অন্য কোনো তরল মিশ্রিত থাকলে তা এই পদ্ধতিতে অপসারণ করা যায় না।
(iii) জলে অস্থায়ী খরতা থাকলে অর্থাৎ জলে ক্যালশিয়াম বা ম্যাগনেশিয়ামের বাই-কার্বনেট লবণ দ্রবীভূত থাকলে, স্ফুটনের ফলে অদ্রাব্য ক্যালশিয়াম কার্বনেট বা ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট লবণ অধঃক্ষিপ্ত হয়। এই অধঃক্ষেপ স্ফুটনপাত্রের গায়ে কঠিন আস্তরণ সৃষ্টি করে পাত্রের ক্ষতিসাধন করে।
\(Ca{\left( {HC{O_3}} \right)_2} \to CaC{O_3} \downarrow + C{O_2} \uparrow + {H_2}O\)
\(Mg{\left( {HC{O_3}} \right)_2} \to MgC{O_3} \downarrow + C{O_2} \uparrow + {H_2}O\)


(2) ক্লোরিনেশান পদ্ধতিতে রোগজীবাণু মুক্তকরণ:ক্লোরিন একটি তীব্র জারক পদার্থ। তাই ক্লোরিন বা ক্লোরিনের কোনো যৌগ যেমন, ক্লোরামিন, ক্লোরিন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি যৌগকে পরিস্রুত জলের সাথে মেশাতে হয়। এই জলের সঙ্গে ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় যে জায়মান অক্সিজেন উৎপন্ন করে তা জলের মধ্যে থাকা রোগজীবাণুকে ধংস্ব করে। \({H_2}O + C{l_2} \to 2HCl + \left[ O \right]\)


ক্লোরিনেশান পদ্ধতিতে জলের রোগজীবাণু মুক্তকরণে অসুবিধা:
(i) ক্লোরিন একটি অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। সুতরাং জলে অতিরিক্ত ক্লোরিন থেকে গেলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।
(ii) এটি ব্যবহার করার সময় কোনো পাইপ থেকে ছিদ্রপথে নির্গত হলে তা স্থানীয় লোকজনের পক্ষে বিপজ্জনক।
(iii) ক্লোরিন মিশে থাকার জন্য জলের মধ্যে বিশেষ এক ধরণের বাজে গন্ধ পাওয়া যায়।


(3) অতিবেগুনী রশ্মির সাহায্যে জলের রোগজীবাণু মুক্তকরণ:এই পদ্ধতিতে মার্কারী ভেপার ল্যাম্পের সাহায্যে প্রস্তুর অতিবেগুনী রশ্মি পরিশ্রুত জলের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়। জলে উপস্থিত রোগজীবাণুবাহী বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া অতিবেগুনী রশ্মি দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

অতিবেগুনী রশ্মির সাহায্যে জলের রোগজীবাণু মুক্তকরণে অসুবিধা:
(i) এক্ষেত্রে পরিশ্রুত জল যদি একটু ঘোলাটে হয় তাহলে এই অতিবেগুনী রশ্মির কিছু অংশ ভাসমান কণার দ্বারা শোষিত হয়ে যায় বা বিচ্ছুরিত হয় বা ছায়া উৎপন্ন হয়। ফলে এই রশ্মির কার্যকারিতা কমে যায়।
(ii) অতিবেগুনীরশ্মি দ্বারা জল পরিশোধন করলে, কোনো বাড়তি বা অতিরিক্ত সংক্রামক নাশক না থাকার জন্য জল বেশিদিন রাখা যায় না। কারণ, তখন নতুন কোনো রোগজীবাণু জলের মধ্যে প্রবেশ করার সম্ভাবনা থেকে যায়।


(4) পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের সাহায্যে জলের পরিশোধন:কিছু পরিমান পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (\(KMn{O_4}\)) জলে মিশ্রিত করলে পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(KOH\)), ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড (\(Mn{O_2}\)) এবং জায়মান অক্সিজেন (\(\left[ O \right]\)) উৎপন্ন হয়। এই জায়মান অক্সিজেন জলের মধ্যে থাকা রোগজীবাণুগুলিকে ধ্বংস করে। এইভাবে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের সাহায্যে জলের বিশুদ্ধিকরণ করা হয়।
\(2KMn{O_4} + {H_2}O = 2KOH + 2Mn{O_2} + 3\left[ O \right]\)

(5) ওজোনের সাহায্যে জলের পরিশোধন:জলের মধ্যে ওজোন মিশ্রিত অক্সিজেন পাঠালে, ওজোন (\({O_3}\)), অক্সিজেন (\({O_2}\)) এবং জায়মান অক্সিজেনে পরিণত হয়। এই জায়মান অক্সিজেন জলের মধ্যে থাকা রোগ জীবাণুকে ধ্বংস করে। এইভাবে ওজোন গ্যাসের সাহায্যে জলকে বিশুদ্ধিকরণ করা হয়।
\({O_3} = {O_2} + \left[ O \right]\)

(6) ব্লিচিং পাউডারের সাহায্যে জল পরিশোধন:এই পদ্ধতিতে জলের সাথে \(1:25\) অনুপাতে ব্লিচিং পাউডার (\(Ca\left( {OCl} \right)Cl\)) মেশানো হয়। এই ব্লিচিং পাউডারের সাথে জলের বিক্রিয়ায় জায়মান ক্লোরিন (\(\left[ {Cl} \right]\)) উৎপন্ন হয়। এই জায়মান ক্লোরিন (\(\left[ {Cl} \right]\)), জলের মধ্যে থাকা রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে। এইভাবে ব্লিচিং পাউডারের সাহায্যে জলকে বিশুদ্ধকরণ করা হয়।
\(Ca\left( {OCl} \right)Cl + {H_2}O = Ca{\left( {OH} \right)_2} + 2\left[ {Cl} \right]\)

(7) পাতন পদ্ধতির সাহায্যে জলকে পরিশোধন:এই পদ্ধতিতে প্রথমে জলকে একটি পাত্রে রেখে তার স্ফুটনাঙ্কে উত্তপ্ত করা হয়। এই উৎপন্ন বাষ্পকে শীতকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করে পুনরায় তরলে (জলে) পরিণত করা হয়। এই জলকে গ্রাহক পাত্রে সংগ্রহ করা হয়। এবং বিভিন্ন অপদ্রব্য পদার্থগুলি পাতন পাত্রে থেকে যায়। এই পাতন পদ্ধতিতে পাওয়া এই জলকে পাতিত জল বলে। এই পাতিত জল হল সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধতম জল।
কিন্তু পাতিত জল পানের উপযুক্ত হয়। কারণ এই জলে -
(i) আমাদের শরীরের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ লবন (সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম) ও বিভিন্ন খনিজ থাকে না।
(ii) এই জলে কার্বন ডাইঅক্সাইড (\(C{O_2}\)), অক্সিজেন (\({O_2}\)) ইত্যাদি গ্যাস দ্রবীভূত না থাকায় এই জল সুস্বাদু হয় না। স্বাদহীন হয়।

[next]

PART: II

খর জল (Hard Water):যে জলে সাবান ঘষলে সহজে ফেনা উৎপন্ন হয় না, প্রথমে সাদা অধঃক্ষেপ উৎপন্ন করে, বেশ কিছুটা সাবান ঘষার পর সামান্য ফেনা উৎপন্ন করে, সেই জলকে খর জল বলে।

মৃদু জল (Soft Water):যে জলে সাবান ঘষলে খুব সহজেই ফেনা উৎপন্ন করে, তাকে মৃদু জল বলে।

জলের খরতার কারণ (Cause of Hardness of Water):প্রাকৃতিক জলে নানা রকম অজৈব লবণ দ্রবীভূত থাকে। অপরদিকে সাবান হল কতকগুলি উচ্চ আণবিকগুরুত্ব বিশিষ্ট ফ্যাটি অ্যাসিডের (পামিটিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক অ্যাসিড, ওলিক অ্যাসিড) সোডিয়াম বা পটাশিয়ামের লবণ। এই সমস্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণগুলি জলে দ্রবীভূত হলে ফেনা উৎপন্ন হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক জলের মধ্যে সাধারণত ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রণের বাইকার্বনেট, ক্লোরাইড, সালফেট ইত্যাদি অজৈব লবণ দ্রবীভূত থাকে। এই লবণগুলি জলে দ্রবীভূত থাকলে, সাবানের ফ্যাটি অ্যাসিডের সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণগুলি জলে দ্রবীভূত হতে পারে না। তাই ফেনা উৎপন্ন হয় না। এই জলে সাবান অনেকক্ষন ঘষলে, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রণের স্টিয়ারেট, পামিটেট, ওলিয়েট লবন উৎপন্ন করে যা জলে অদ্রাব্য, তাই এই জলে সাবান ঘষলে এগুলির সাদা অধঃক্ষেপ পড়ে।
যতক্ষন না পর্যন্ত জলে উপস্থিত সমস্ত ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রণের ফ্যাটি অ্যাসিডের লবণগুলি অধঃক্ষিপ্ত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ফেনা উৎপন্ন হয় না। জলে খরতা সৃষ্টিকারী সমস্ত লবণগুলি জলে অধঃক্ষিপ্ত হয়ে পড়ার পর জলে ফেনা উৎপন্ন হতে শুরু করে।
\(Ca{\left( {HC{O_3}} \right)_2} + 2Na - Stiarate = Ca - Stiarate \downarrow + 2NaHC{O_3}\)
\(MgS{O_4} + 2K - Oliate = Mg - Oliate \downarrow + {K_2}S{O_4}\)
\(CaC{l_2} + 2Na - Pamitate = Ca - Pamitate \downarrow + 2NaCl\)


জলের খরতার শ্রেণিবিভাগ (Classification of Hardness of Water):জলের খরতাকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়:
(1) অস্থায়ী খরতা (Temporary Hardness of Water):
(2) স্থায়ী খরতা (Permanent Hardness of Water):


অস্থায়ী খরতা (Temporary Hardness of Water):প্রাকৃতিক জলের মধ্যে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম আয়রণ ইত্যাদি ধাতুর বাইকার্বনেট লবণ দ্রবীভূত থাকলে, সেই খরতাকে শুধুমাত্র স্ফুটন প্রণালী দ্বারাই সহজে দূরীভূত করা যায়। জলের এই ধরণের খরতাকে অস্থায়ী খরতা (Temporary Hardness of Water ) বলে।

অস্থায়ী খরতার কারণ (Caused of Temporary Hardness of Water):প্রাকৃতিক জলের মধ্যে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রণ ইত্যাদি ধাতুর কেবলমাত্র বাইকার্বনেট লবণ দ্রবীভূত থাকলে সেই জলের খরতা অস্থায়ী হয়। অর্থাৎ প্রাকৃতিক জলে \(Ca{\left( {HC{O_3}} \right)_2}\), \(MgHC{O_3}\), \(Fe{\left( {HC{O_3}} \right)_2}\) ইত্যাদি বাইকার্বনেট লবণ দ্রবীভূত থাকলে জলে অস্থায়ী খরতা সৃষ্টি হয়।

স্থায়ী খরতা (Permanent Hardness of Water):প্রাকৃতিক জলের মধ্যে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রণের ক্লোরাইড, সালফেট ইত্যাদি জাতীয় লবণ দ্রবীভূত থাকলে সেই জলের খরতা স্থায়ী হয়। অর্থাৎ প্রাকৃতিক জলে \(CaC{O_3}\), \(CaS{O_4}\), \(MgC{l_2}\), \(MgS{O_4}\), \(FeC{l_2}\), \(FeC{O_3}\) ইত্যাদি লবণ দ্রবীভূত থাকলে জলে স্থায়ী খরতা সৃষ্টি হয়।

স্থায়ী খরতার কারণ (Caused of Permanent Hardness of Water):প্রাকৃতিক জলের মধ্যে ক্যালশিয়াম, ম্যগনেশিয়াম, আয়রণের ক্লোরাইড, সালফেট ইত্যাদি লবণ অর্থাৎ ক্যালশিয়াম ক্লোরাইড (\(CaC{l_2}\)), ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড (\(MgC{l_2}\)), ফেরাস ক্লোরাইড (\(FeC{l_2}\)), ক্যালশিয়াম সালফেট (\(CaS{O_4}\)), ম্যাগনেশিয়াম সালফেট (\(MgS{O_4}\)), ফেরাস সালফেট (\(FeS{O_4}\)) ইত্যাদি লবণ দ্রবীভূত থাকলে ওই জল স্থায়ী খর হয়। জলের এই স্থায়ী খরতাকে খুব সহজে দূরীভূত করা যায় না।

জলের অস্থায়ী খরতা দূরীকরণ (Removal of Temporary Hardness of Water by Boiling Process):অস্থায়ী খরজলকে স্ফুটন পদ্ধতির সাহায্যে খরতা দূরীকরণ করা যায়। অস্থায়ী খরজলকে তার স্ফুটনাঙ্কে ফোটালে, ওই জলে দ্রবীভূত বিভিন্ন বাইকার্বনেট লবনগুলি, জলে অদ্রাব্য কার্বনেট লবণে পরিনত হয় এবং অধঃক্ষিপ্ত হয়। যেমন, ক্যালশিয়াম বাইকার্বনেট (\(Ca{\left( {HC{O_3}} \right)_2}\)), ম্যাগনেশিয়াম বাইকার্বনেট (\(Mg{\left( {HC{O_3}} \right)_2}\)), ফেরাস বাইকার্বনেট (\(Fe{\left( {HC{O_3}} \right)_2}\)) ইত্যাদি জলে দ্রবীভূত লবণগুলি, জলে অদ্রাব্য ক্যালশিয়াম কার্বনেট (\(CaC{O_3}\)), ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট (\(MgC{O_3}\)), ফেরাস কার্বনেট (\(FeC{O_3}\)) ইত্যাদি লবণে পরিনত হয় এবং পাত্রের তলায় অধঃক্ষিপ্ত হয় অর্থাৎ থিতিয়ে পড়ে। পরে এই জলকে ফিল্টার করে পরিশ্রুত করে নিলেই মৃদু জল পাওয়া যায়।
\(Ca{\left( {HC{O_3}} \right)_2}CaC{O_3} + C{O_2} \uparrow + {H_2}O\)
\(Mg{\left( {HC{O_3}} \right)_2}MgC{O_3} + C{O_2} \uparrow + {H_2}O\)
\(Fe{\left( {HC{O_3}} \right)_2}FeC{O_3} + C{O_2} \uparrow + {H_2}O\)


আয়ন বিনিময় রেজিন পদ্ধতিতে জলের স্থায়ী ও অস্থায়ী খরতা দূরীকরণ (Removal of Both Type of Hardness of Water By Ion-Exchange Resin Process):প্রাকৃতিক জলের স্থায়ী ও অস্থায়ী খরতা দূরীকরণ করার জন্য রেজিন ব্যবহার করা হয়। রেজিন হল একপ্রকার কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত জৈব যৌগ। এতে একাধিক সালফোনিক অ্যাসিড (\(S{O_3}H\)) মূলক সমন্বিত বৃহদাকৃতি জটিল জৈব যৌগ। এই রেজিনকে সছিদ্র দানার আকারে নেওয়া হয়।
প্রথমে এই সছিদ্র দানার আকারে নেওয়া রেজিন স্তম্ভের উপর দিয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড (\(NaCl\)) দ্রবণ চালনা করে রেজিনের সোডিয়াম লবণ (\(R - S{O_3}Na\)) তৈরি করা হয়। পরে, এর মধ্য দিয়ে খরজল পাঠালে, খরজলের \(C{a^{ + + }}\), \(M{g^{ + + }}\), \(F{e^{ + + }}\), \(F{e^{ + + + }}\) আয়নগুলির সঙ্গে রেজিনের সোডিয়াম লবণের মধ্যে থাকা \(N{a^ + }\) আয়নের বিনিময় ঘটে। এর ফলে যে জল বেরিয়ে আসে সেই জলে খরতা সৃষ্টিকারী ধাতব আয়নগুলি আর থাকে না। অর্থাৎ মৃদু জলে পরিণত হয়।
\(R - S{O_3}H + NaCl = R - S{O_3}Na + HCl\)
\(2R - S{O_3}Na + Mg{\left( {HC{O_3}} \right)_2} = {\left( {R - S{O_3}} \right)_2}Mg \downarrow + 2NaHC{O_3}\)
\(2R - S{O_3}Na + CaC{l_2} = {\left( {R - S{O_3}} \right)_2}Ca \downarrow + 2NaCl\)
\(2R - S{O_3}Na + CaS{O_4} = {\left( {R - S{O_3}} \right)_2}Ca \downarrow + 2N{a_2}S{O_4}\)
\(2R - S{O_3}Na + MgS{O_4} = {\left( {R - S{O_3}} \right)_2}Mg \downarrow + 2N{a_2}S{O_4}\)
দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করলে রেজিনের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তখন এর মধ্যে নির্দিষ্ট গাঢ়ত্বের সোডিয়াম ক্লোরাইড (\(NaCl\)) দ্রবণ চালনা করলে এই রেজিন পুনরায় কার্যক্ষম হয়। অর্থাৎ অদ্রাব্য রেজিনের অন্তর্গত ক্যালশিয়াম (\(C{a^{ + + }}\)), ম্যাগনেশিয়াম (\(M{g^{ + + }}\)), আয়রণের (\(F{e^{ + + }}\)) আয়নগুলি আবার সোডিয়াম আয়ন (\(N{a^ + }\)) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়।

এখানে বিশেষভাবে জানা দরকার যে, খরজল থেকে খরতা সৃষ্টিকারী আয়নগুলি (\(C{a^{ + + }}\), \(M{g^{ + + }}\) ইত্যাদি ) অপসারিত হলেও জলে \(N{a^ + }\), \(C{l^ - }\), \(SO_4^ = \), \(HCO_3^ - \) ইত্যাদি আয়নগুলি উভয়মুখী বিক্রিয়ার জন্য জলে পুনরায় যুক্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ জল আয়ন শূন্য হয় না।
\(NaHC{O_3} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} N{a^ + } + HCO_3^ - \)
\(NaCl \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} N{a^ + } + C{l^ - }\)
\(N{a_2}S{O_4} \mathbin{\lower.3ex\hbox{$\buildrel\textstyle\rightarrow\over{\smash{\leftarrow}\vphantom{_{\vbox to.5ex{\vss}}}}$}} 2N{a^ + } + SO_4^ = \)
এই \(N{a^ + }\) আয়নগুলিকে দূর করার জন্য প্রাপ্ত মৃদুজলকে অন্য একটি ক্যাটায়ন বিনিময়কারী রেজিনের (\(R - H\)) মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়। তাতে মৃদু জল আম্লিক হয়ে যায়।
\(R - H + NaCl = R - Na \downarrow + HCl\)
এরপর \(C{l^ - }\), \(SO_4^ = \), \(HCO_3^ - \) ইত্যাদি অ্যানায়নগুলিকে মুক্ত করার জন্য এই আম্লিকধর্মী মৃদু জলকে এবার অ্যানায়ন বিনিময়কারী রেজিনের (\(R - N{H_2}\)) মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়।
\(R - N{H_2} + {H_2}O = RN{H_3}OH\)
\(R - N{H_3}OH + C{l^ - } = R - N{H_3}Cl + O{H^ - }\)
\(2R - N{H_3}OH + SO_4^ = = {\left( {R - N{H_3}} \right)_2}S{O_4} \downarrow + 2O{H^ - }\)
[next]

PART: III
জলদূষণ (Water Pollution):জলের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের উপস্থিত অশুদ্ধির (\(N{H_3}\), \(C{O_2}\), \({H_2}S\)) পরিমাণ বেড়ে গেলে বা, বিভিন্ন অবাঞ্ছিত বস্তুকণা যেমন কাদা, মাটি, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য, কীটপতঙ্গ বা জীবাণু জলের সঙ্গে মিশে, জলের ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটায় এবং মানুষসহ অন্যান্য জীবকুলের যদি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে ওঠে এবং তার ফলে জীবকুলের অস্থিত্ব বিপন্ন হয় এবং প্রাণী বা বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে, তাহলে জলের ওই অবস্থাকে জলদূষণ বলা হয়।

জলদূষণের কারণ (Cause of Water Pollution):জলের উৎসের প্রকৃতি অনুযায়ী জলদূষণকে তিনভাগে ভাগ করা যায়:
(1) ভূ-তল বা অন্তর্দেশীয় জলদূষণ:
(2) ভূ-নিম্নস্থ জলদূষণ:
(3) সামুদ্রিক জলদূষণ:
জলদূষণ মূলত মনুষ্যসৃষ্ট হলেও কিছু প্রাকৃতিক কারণে ঘটে থাকে।
(i) জলের উৎসের প্রকৃতি ও জল দূষকের প্রকৃতির কারণে জলদূষণ ঘটে।
(ii) জলে আর্সেনিক ও ফ্লুওরাইড যৌগের উপস্থিতির কারণে জলদূষণ ঘটে।
(iii) চাষের জমিতে যথেচ্ছ পরিমাণে ফসফেট, নাইট্রেট, সালফেট জাতীয় সারের ব্যবহারের জন্য জলদূষণ ঘটে।
(iv) জলে ডিটারজেন্ট ও কীটপতঙ্গনাশক দ্রব্যের বিপুল ব্যবহারের জন্য জলদূষণ ঘটে থাকে।
(v) গৃহস্থালী, কারখানা, হাসপাতাল ইত্যাদি জায়গা থেকে নানারকম রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ (যেমন, পচনশীল জৈব, প্লাস্টিক, পারদ, সীসা আর্সেনিক ইত্যাদির বিভিন্ন ধাতব পদার্থ, জৈব ও অজৈব সালফার জাতীয় যৌগ এবং তেলজাতীয় রঙ জলে মিশে জলদূষণ ঘটায়।)
(vi) বৃষ্টিপাত ও ভূমিক্ষয়ের জন্য জলের সাথে মৃত্তিকাকণা ও বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য জলের সাথে মিশে গিয়ে জলদূষণ ঘটায়।
(vii) বিভিন্ন প্রাণীর বর্জ্য পদার্থ এবং উদ্ভিদের শুকনো পাতা জলের সাথে মিশে জলকে দূষিত করে।


প্রাকৃতিক উৎসের কারণে জলদূষণ:(i) আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে নির্গত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থসমূহ জলে মিশে জলদূষণ ঘটায়।
(ii) পাহাড়-পর্বত থেকে নামা ধ্বসের কারণে জল দূষিত হয়।
(iii) ভূমিক্ষয়ের কারণে জল দূষিত হয়।
(iv) জীবজন্তু, গাছপালার মৃত্যুজনিত বর্জ্য পদার্থ মিশে জল দূষিত হয়।
(v) ভূগর্ভস্থ জল নলকূপ মারফৎ উত্তোলন করার ফলে পানীয় জলে আর্সেনিক এবং ফ্লুওরাইডের বিষে জল দূষিত হয়। এই আর্সেনিক অ্যাসিড এবং আর্সেনাস অ্যাসিড যা ডিপ্রোটোনেটেড অবস্থায় জলে মিশে থাকে। গভীর নলকূপের সাহায্যে ভূগর্ভের জল বেশি মাত্রায় তুললে ওই জলে আর্সেনিক চলে আসে।
(vi) প্রাকৃতিক কারণে সমুদ্র জলে এবং বিভিন্ন নদনদীর জলে ফ্লুওরাইড থাকে। এই ফ্লুওরাইড অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। জলে মিশে থেকে জলদূষণ ঘটায়।


কৃত্রিম বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জলদূষণ:

জৈব পরিপোষক দূষক:(i) কলকারখানা থেকে নির্গত প্রচুর পরিমাণে জৈব পরিপোষক জলকে দূষিত করে এবং এইসব দূষক অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা নষ্ট হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় বলে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমান কমে যায়।
(ii) জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার জন্য জলজ প্রাণী ও মাছের ক্ষতিসাধন হয়, এমনকি অক্সিজেনের অভাবে মারাও যায়।


জৈব দুষক:(i) কিছু জৈব দূষক কলকারখানা থেকে নির্গত হয় যা প্রকৃতিতে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া বা অণুজীব দ্বারা নষ্ট হয় না। এদের উপস্থিতিতে জল দূষিত হয়, জলজ প্রাণীর ক্ষতিসাধন করে।
(ii) জলে থাকা এই জৈব দূষকগুলির জন্য ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
(iii) কলকারখানা থেকে নির্গত এই জৈব দূষকগুলি হল মূলত পলিক্লোরিনেটেড বাই ফিনাইলস্‌, ফেলন ইত্যাদি।


অজৈব দূষক:(i) কলকারখানার বর্জ্য হিসাবে বিভিন্ন অ্যাসিড, লবণ ও বিভিন্ন ধাতু জলে দূষণ ঘটায়।
(ii) আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বা জল শোধন প্ল্যান্ট থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরিন জলে মিশে।
(iii) সার কারখানা ও সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে নাইট্রেট জাতীয় যৌগ জলে মিশে জল দূষিত করে।
(iv) লন্ড্রি শিল্পে ব্যবহৃত ডিটারজেন্ট থেকে ফসফেট জলে মিশে জল দূষণ ঘটায়।
(v) ইলেকট্রোপ্লেটিং কারখানা থেকে সায়ানাইড, পারদ, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি যৌগ জলে মিশে মানুষের এবং জলজ প্রাণীর অসম্ভব ক্ষতিসাধন করে।


ডিটারজেন্টের কারণে জলদূষণ:

জামাকাপড় পরিষ্কার করার জন্য বর্তমানে সাবানের বিকল্প হিসাবে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ডিটারজেন্টের মূল অংশ হল অ্যালকিল বেঞ্জিন সালফোনেট (A.B.S)। এই ডিটারজেন্টের ক্ষারীয় গুন বাড়ানোর জন্য এর সঙ্গে বিল্ডার ও ফিলার অংশ হিসাবে সোডিয়াম ট্রাই পলিফসফেট যোগ করা হয়। অধিকাংশ ডিটারজেন্ট দীর্ঘ শৃঙ্খলযুক্ত হওয়ায় এরা অণুজীব দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয় না। ফলে জলের মধ্যে এরা চিরকাল অবিকৃত অবস্থায় থেকে জল ও মাটিকে দূষিত করে। তাছাড়া এগুলি থেকে উৎপন্ন \(PO_4^ \equiv \) জলের মধ্যে উপস্থিত খরতা সৃষ্টিকারী \(C{a^{ + + }}\), \(M{g^{ + + }}\) আয়নের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জলে দ্রাব্য জটিল লবণ উৎপন্ন করে। এই \(PO_4^ \equiv \) আয়ন ঘটিত জটিল লবণগুলি জলজ উদ্ভিদ ও শেওলার পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ফলে তাদের দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটে এবং জলের মধ্যে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমান কমে যায়।

Thursday, June 1, 2017

Oxide (অক্সাইড): WBBSE IX STANDARD

June 01, 2017 0 Comments
Oxide, অক্সাইড, আম্লিক অক্সাইড, ক্ষারীয় অক্সাইড, উভধর্মী অক্সাইড, প্রশম অক্সাইড
অক্সাইড (Oxide): অক্সিজেনের সঙ্গে অন্য কোনো মৌল (ধাতু বা অধাতু), রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা যুক্ত হয়ে যে দ্বি-মৌল বিশিষ্ট যৌগ উৎপন্ন করে, তাকে অক্সাইড বলে। অর্থাৎ অক্সাইড (Oxide) যৌগে একটি উপাদান অক্সিজেন থাকবেই এবং দুটি মৌলের মধ্যে সর্বদা অক্সিজেনের তড়িৎঋনাত্বকতা কম হবে।
যেমন, কার্বন ডাইঅক্সাইড (\(C{O_2}\)), সালফার ডাইঅক্সাইড (\(S{O_2}\)), ক্যালশিয়াম অক্সাইড (\(CaO\)), জল (\({H_2}O\)) ইত্যাদি।

অক্সাইডগুলিকে তাদের ধর্মের ভিত্তিতে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:
যেমন,
(A) অধাতব অক্সাইড (Oxide form with Non-metal):
এই অধাতব অক্সাইড আবার দুইধরণের হয়
(1) আম্লিক অক্সাইড (Acidic Oxides):
(2) প্রশম অক্সাইড (Neutral Oxides):

(B) ধাতব অক্সাইড (Oxide formed with metal):
এই ধাতব অক্সাইড আবার দুই ধরণের হয়,
(1) ক্ষারীয় অক্সাইড (Basic Oxides):
(2) উভধর্মী অক্সাইড (Amphoteric Oxides):

এছাড়াও আরও কয়েকপ্রকার অক্সাইডের উদাহরণ পাওয়া যায়, যেমন
(1) সংক্ষানুপাতবিহীন অক্সাইড (Non Stochiometric Oxides):

(2) মিশ্র অক্সাইড (Mixed Oxides): ফেরোসোফেরিক অক্সাইড (\(F{e_3}{O_4}\)),

(3) পার-অক্সাইড (Per-Oxides): বেরিয়াম পারঅক্সাইড (\(Ba{O_2}\)), হাইড্রোজেন পারক্সাইড (\({H_2}{O_2}\))

(4) পলি অক্সাইড (Poly Oxides): ট্রাইঅক্সিডেন্ট (\({H_2}{O_3}\)), হাইড্রোজেন টেট্রোক্সাইড (\({H_2}{O_4}\)), হাইড্রোজেন পেন্টোক্সাইড (\({H_2}{O_5}\))

(5) সাব-অক্সাইড (Sub-Oxides): বোরন সাবঅক্সাইড (\({B_6}O\)), কার্বন সাবঅক্সাইড (\({C_3}{O_2}\)), রুবিডিয়াম সাবঅক্সাইড (\(R{b_9}{O_2}\))

আম্লিক অক্সাইড (Acidic Oxide):

অধাতুর সঙ্গে অক্সিজেনের দহনে উৎপন্ন যে সমস্ত অক্সাইড, জলে দ্রবীভূত হয়ে অ্যাসিড উৎপন্ন করে এবং ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবন ও জল উৎপন্ন করে, তাদের আম্লিক অক্সাইড (Acidic Oxide) বলে।
যেমন, কার্বন ডাইঅক্সাইড (\(C{O_2}\)), সালফার ডাইঅক্সাইড (\(S{O_2}\)), সালফার ট্রাইঅক্সাইড (\(S{O_3}\)), ফসফরাস পেন্টঅক্সাইড (\({P_2}{O_5}\)), ডাই নাইট্রোজেন পেন্টঅক্সাইড (\({N_2}{O_5}\)), নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (\(N{O_2}\)), সিলিকন ডাইঅক্সাইড (\(Si{O_2}\)) ইত্যাদি।

আম্লিক অক্সাইডের বৈশিষ্ট্য:
(1) অক্সিজেনের সঙ্গে অধাতুর দহনে আম্লিক অক্সাইড উৎপন্ন হয়।
(2) আম্লিক অক্সাইড জলে দ্রবীভূত হয়ে অ্যাসিড উৎপন্ন করে।
(3) আম্লিক অক্সাইডের জলীয় দ্রবণ নীল লিটমাসকে লাল করে।
(4) আম্লিক অক্সাইড, ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে।

কয়েকটি উদাহরণ:

কার্বন ডাইঅক্সাইড একটি আম্লিক অক্সাইড:
\(C + {O_2} = C{O_2}\)
\(C{O_2} + {H_2}O = {H_2}C{O_3}\) (কার্বনিক অ্যাসিড)
\(C{O_2} + 2NaOH = N{a_2}C{O_3} + {H_2}O\) (সোডিয়াম কার্বনেট লবণ)

সালফার ডাইঅক্সাইড একটি আম্লিক অক্সাইড:
\(S + {O_2} = S{O_2}\)
\(S{O_2} + {H_2}O = {H_2}S{O_3}\) (সালফিউরাস অ্যাসিড)
\(S{O_2} + 2NaOH = N{a_2}S{O_3} + {H_2}O\) (সোডিয়াম সালফাইট লবণ)

সালফার ট্রাইঅক্সাইড একটি আম্লিক অক্সাইড:
\(2S + 3{O_2} = 2S{O_3}\)
\(S{O_3} + {H_2}O = {H_2}S{O_4}\) (সালফিউরিক অ্যাসিড)
\(S{O_3} + 2NaOH = N{a_2}S{O_4} + {H_2}O\) (সোডিয়াম সালফেট লবণ)

ফসফরাস পেন্টঅক্সাইড একটি আম্লিক অক্সাইড:
\(4P + 5{O_2} = 2{P_2}{O_5}\)
\({P_2}{O_5} + 3{H_2}O = 2{H_3}P{O_4}\) (অর্থোফসফোরিক অ্যাসিড)
\({P_2}{O_5} + 6NaOH = 2N{a_3}P{O_4} + 3{H_2}O\) (সোডিয়াম ফসফেট লবণ)

সিলিকন একটি ধাতুকল্প, এই সিলিকন ডাইঅক্সাইড (সিলিকা) জলে দ্রবীভূত হয় না, কিন্তু ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সিলিকেট লবণ () ও জল উৎপন্ন করে। তাই সিলিকন ডাইঅক্সাইড একটি আম্লিক অক্সাইড।
\(Si{O_2} + 2NaOH = N{a_2}Si{O_3} + {H_2}O\)

কতকগুলি ধাতুর উচ্চতর অক্সাইড, আম্লিক অক্সাইড হয়। কারণ, এগুলি জলীয় দ্রবণে যথাক্রমে পারম্যাঙ্গানিক অ্যাসিড (\(HMn{O_4}\)) ও ডাইক্রোমিক অ্যাসিড (\({H_2}C{r_2}{O_7}\)) উৎপন্ন করে। তাই এরা ধাতব অক্সাইড হলেও, আম্লিক অক্সাইড। যেমন,
(1) ম্যাঙ্গানিজ হেপ্টোক্সাইড (\(M{n_2}{O_7}\)), ক্রোমিয়াম ট্রাইঅক্সাইড (\(Cr{O_3}\)) ইত্যাদি

ক্ষারীয় অক্সাইড (Basic Oxide):

ধাতুর সঙ্গে অক্সিজেনের দহনে উৎপন্ন যে সমস্ত অক্সাইড, জলে দ্রবীভূত হয়ে ক্ষার উৎপন্ন করে এবং অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবন ও জল উৎপন্ন করে, তাদের ক্ষারীয় অক্সাইড (Basic Oxide) বলে।
যেমন, সোডিয়াম মনোক্সাইড (\(N{a_2}O\)), পটাশিয়াম অক্সাইড (\({K_2}O\)), ক্যালশিয়াম অক্সাইড (\(CaO\)), ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড (\(MgO\)), ফেরাস অক্সাইড (\(FeO\)), ফেরিক অক্সাইড (\(F{e_2}{O_3}\)), কিউপ্রিক অক্সাইড (\(CuO\)) ইত্যাদি।

ক্ষারীয় অক্সাইডের বৈশিষ্ট্য:
(1) অক্সিজেনের সঙ্গে ধাতুর দহনে ক্ষারীয় অক্সাইড উৎপন্ন হয়।
(2) ক্ষারীয় অক্সাইড জলে দ্রবীভূত হয়ে ক্ষার উৎপন্ন করে।
(3) ক্ষারীয় অক্সাইডের জলীয় দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল করে।
(4) ক্ষারীয় অক্সাইড, অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে।

কয়েকটি উদাহরণ:

সোডিয়াম মনোক্সাইড (\(N{a_2}O\)) একটি ক্ষারীয় অক্সাইড:
\(4Na + {O_2} = 2N{a_2}O\)
\(N{a_2}O + {H_2}O = 2NaOH\) (সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড ক্ষার)
\(N{a_2}O + 2HCl = 2NaCl + {H_2}O\) (সোডিয়াম ক্লোরাইড লবণ)

পটাশিয়াম অক্সাইড (\({K_2}O\)) একটি ক্ষারীয় অক্সাইড:
\(4K + {O_2} = 2{K_2}O\)
\({K_2}O + {H_2}O = 2KOH\) (পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড ক্ষার)
\({K_2}O + 2HCl = 2KCl + {H_2}O\) (পটাশিয়াম ক্লোরাইড লবণ)

ক্যালশিয়াম অক্সাইড (\(CaO\)) একটি ক্ষারীয় অক্সাইড:
\(2Ca + {O_2} = 2CaO\)
\(CaO + {H_2}O = Ca{\left( {OH} \right)_2}\)
\(CaO + 2HCl = CaC{l_2} + {H_2}O\)

উভধর্মী অক্সাইড (Amphoteric Oxide):

যে সমস্ত ধাতব অক্সাইড, অ্যাসিড এবং ক্ষার উভয়ের সাথেই বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে, তাদের উভধর্মী (Amphoteric Oxide) অক্সাইড বলে।
যেমন, জিঙ্ক অক্সাইড (\(ZnO\)), অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (\(A{l_2}{O_3}\)), স্ট্যানাস অক্সাইড (\(SnO\)), লেড অক্সাইড (\(PbO\)) ইত্যাদি

জিঙ্ক অক্সাইড (\(ZnO\)) একটি উভধর্মী অক্সাইড
(1) জিঙ্ক অক্সাইড (\(ZnO\)), লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের (\(HCl\)) সঙ্গে বিক্রিয়া করে, দ্রাব্য জিঙ্ক ক্লোরাইড লবণ (\(ZnC{l_2}\)) এবং জল উৎপন্ন করে।
\(ZnO + 2HCl = ZnC{l_2} + {H_2}O\)
আবার
(2) জিঙ্ক অক্সাইড (\(ZnO\)), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের (\(NaOH\)) এর সাথে বিক্রিয়া করে, দ্রাব্য সোডিয়াম জিঙ্কেট লবণ (\(N{a_2}Zn{O_2}\)) এবং জল উৎপন্ন করে। \(ZnO + 2NaOH = N{a_2}Zn{O_2} + {H_2}O\)

তাই জিঙ্ক অক্সাইডের (\(ZnO\)) অ্যাসিড ও ক্ষার উভয় ধর্মই থাকার জন্য এটি একটি উভধর্মী (Amphoteric Oxide) অক্সাইড।

অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (\(A{l_2}{O_3}\)) একটি উভধর্মী অক্সাইড:
(1) অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (\(A{l_2}{O_3}\)), লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের (\(HCl\)) সঙ্গে বিক্রিয়া করে, দ্রাব্য অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড লবণ (\(AlC{l_3}\)) ও জল উৎপন্ন করে।
\(A{l_2}{O_3} + 6HCl = 2AlC{l_3} + 3{H_2}O\)
আবার
(2) অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (\(A{l_2}{O_3}\)), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (\(NaOH\)) ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া করে, দ্রাব্য সোডিয়াম অ্যালুমিনেট লবণ (\(NaAl{O_2}\)) ও জল উৎপন্ন করে।
\(A{l_2}{O_3} + 2NaOH = 2NaAl{O_2} + {H_2}O\)

তাই অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের (\(A{l_2}{O_3}\)) অ্যাসিড ও ক্ষার ধর্ম থাকার জন্য এটি একটি উভধর্মী (Amphoteric Oxide) অক্সাইড।

প্রশম অক্সাইড (Neutral Oxide):

যে সমস্ত অক্সাইড, অ্যাসিড ও ক্ষার কোনোটির সাথেই বিক্রিয়া করে না, তাদের প্রশম অক্সাইড () বলে। প্রশম অক্সাইড সাধারণত অধাতব মৌলের অক্সাইড হয়।
যেমন,
কার্বন মনোক্সাইড (\(CO\)), নাইট্রিক অক্সাইড (\(NO\)), নাইট্রাস অক্সাইড (\({N_2}O\)), জল (\({H_2}O\)) ইত্যাদি।

ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি সন্ধিগত মৌলের পরিবর্তনশীল যোজ্যতা থাকার জন্য, এরা তিন ধরনেরই অক্সাইড গঠন করতে পারে। এদের বেশি যোজ্যতার মৌলগুলি সাধারণত আম্লিক অক্সাইড ও কম যোজ্যতার মৌলগুলির অক্সাইড সাধারণত ক্ষারীয় চরিত্রের হয়।

অক্সাইডের ধরণ আম্লিক অক্সাইড ক্ষারীয় অক্সাইড উভধর্মী অক্সাইড
ক্রোমিয়াম (Cr) \(Cr{O_3}\) \(CrO\) \(C{r_2}{O_3}\)
ম্যাঙ্গানিজ (Mn) \(M{n_2}{O_7}\) \(MnO\) \(Mn{O_2}\)